বেতনের টাকা কেটে নিবে এ ভয়ের কারনে মালিকের গাড়ি ও মাল রক্ষা করতে গিয়ে কলেজ ছাত্র ট্রেনে কেটে নিহত হয়। গত ৬ মার্চ মেহেদী হাসান কালীগঞ্জ শহর থেকে বেকারী পণ্য নিয়ে লাটাগাড়ি চালিয়ে বাবরা গ্রামের দিকে যাচ্ছিল। পথে বাবরা রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় লাইনের উপর নসিমন গড়িটি আটকে যায়। সেসময় নসিমনটি ঠেলে সরাতে গেলে খুলনা থেকে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন লাটাগাড়িটিকে কে ধাক্কা দেয়। এতে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মেহেদী হাসান মারা যান। অঙ্কিতা ট্রেডার্স এর অবৈধ ইঞ্জিন চালিত লাটা গাড়িও মালামাল বাঁচাতে গিয়ে প্রান হারায় হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ও কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মাতা সন্তান হারিয়ে সারাক্ষর পাগলের ন্যায় প্রলাপ বকছে। গত ৬ মার্চ ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশনের অদূরে বাবরা রেলগেট নামক স্থানে ্ হৃদয়বিদায়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও কালীগঞ্জ শহরের কলেজপাড়ার বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারশিপ নিয়েব্যবসা করা অঙ্কিতা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কালীগঞ্জের খামারমুন্দিয়া গ্রামের কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে বিপুল কুমার সন্তান হারা অসহায় হতদরিদ্র এই পরিবারটির কোন খোজ খবর রাখেনি। মোবারকগঞ্জ রেলষ্টেশনের রেজিষ্টার হিসাবে দেখা গেছে দুর্ঘটনার দিন খুলনা থেকে ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বারোবাজার থেকে ছেড়ে আসে সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে। ওই ট্রেনটি মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশনের প্রবেশ করে ১১ টা ২৬ মিনিটে। নিহত মেহেদীর মুঠোফোনে ৬ মার্চ ২০২৩ এ ইনকামিং কলের তালিকা খুঁজে দেখা যায়, পরিবেশক বিপুল কুমারের ০১৮৪৫৯৪৪২২৫ এই নাম্বার থেকে নিহত মেহেদী হাসানের মোবাইল ফোনে কল করে সকাল ১১ টা ১৭ মিনিটে ২৭ সেকেন্ড ও ১১ টা ২৭ মিনিটে ৪৭ সেকেন্ড কথা বলেন। চিত্রা ট্রেনটি বারোবাজার থেকে ছেড়ে এসে মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশনে প্রবেশের সময়ে মেহেদীর কাজ করা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বিপুল কুমারের ফোনালাপ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। দুর্ঘটনার দিন বাবরা রেল গেটে দায়িত্বরত গেটকিপার রুবেল হোসেন জানান, মেহেদির মাল বোঝাই গাড়িটি রেললাইনের উপর আটকে গেলে আমরা কয়েক দফা চেষ্টা করেও বোঝাই গাড়িটি লাইন থেকে সরাতে পারিনি। ইতিমধ্যে বারোবাজার থেকে ট্রেন ছেড়ে খবর পেয়ে মেহেদী কে লাইনের উপর থেকে ধরে এনে ঘরে বসিয়ে রেখে লাল পতাকা নিয়ে ট্রেন থামাতে যায়। এসময় আমি তাকে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বুঝিয়ে ঘরে বসতে বলি। পরবর্তীতে ট্রেন থামাতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে দেখি মেহেদী কাটা পড়েছে ট্রেনে। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও কেন সে ট্রেন লাইন থেকে লাটা গাড়িটি সরানোর জন্য গেল এটা আমার বুঝে আসে না। নিহত মেহেদির পিতা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করতে করতে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। মেহেদি হাসান নিজের জীবনের কথা না ভেবে ডিলারের মালামালসহ লাটাগাড়ি সরাতে গিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মারা গেছে। অথচ তার মাহাজন বিপুল বাবু সেভাবে কোনো খোঁজ খবর নেননি। তার পাওনা বেতনের টাকা পরিশোধ করেননি,উনার আচার ব্যবহার টা কেমন যেন মনে হচ্ছে। অঙ্কিতা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বিপুল কুমারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মেহেদীর মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমিও মর্মাহত। সে আমার কাছে কোনো টাকা পাবে না।ঐদিন আমি তার জানাজায় গেছিলাম। এরপর সেভাবে তার খোঁজখবর রাখতে পারি নাই সত্য। তবে ২ দিন আগে যেয়ে আমি তার বাপ মার সঙ্গে কথা বলে এসেছি। এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে নানারকম কথা ছড়াচ্ছে। যে কারণে অনেকটা ভয়েই আমি খোঁজ-খবর সেভাবে রাখতে পারিনি। আর দুর্ঘটনার দিন আমি মেহেদীর ফোনে কল দিলে অন্যলোক ফোনটি রিসিভ করেছিল। প্রায় সাত মাস আগে মাত্র ১০ হাজার টাকা বেতনে অঙ্কিতা ট্রেডার্সে কাজ নেয় দরিদ্র পরিবারের কলেজ পড়ুয়া মেহেদী হাসান। পিতা মাহাবুবুর রহমান চাতালের মিস্ত্রীর কাজ ৫ জনের সংসার চালাতে কষ্ট পাছিলেন না। সে কারনে ছেলেকে অন্যের দোকানে কাজে প্রবেশ করায়। স্বপ্নবাজ মেহেদী সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও রাতের বেলা কম্পিউটারে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষন নিচ্ছিল। অষ্টম শ্রেনিতে পড়ুয়া বোন মেহতাজ খাতুন বলছিল অঙ্কিতা ট্রেডার্সের মালিক বিপুল কুমারের ভূমিকা নিয়ে পরিচিতি জন আত্নীয়-স্বজন তাই প্রশ্ন তুলেছেন।