একই গ্রামে জন্ম তিনজনের। বেড়েও ওঠাও একসঙ্গে। দিন নেই, রাত নেই একজনের প্রয়োজনে অন্য দুজন ছুটে আসতেন। এলাকার সবার কাছেও ‘হরিহর আত্মা’ পরিচিতি পেয়েছিলেন তিন তরুণ। কে জানত, পৃথিবী থেকে বিদায়ও নেবেন এরমধ্যে একসাথে দুই বন্ধু। কবরও দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি। এই তিন বন্ধু হলেন নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের ভুস্কুর গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম জেমস (১৭), দিনমজুর মোখলেছার রহমানের ছেলে সোহানুর রহমান সোহান (১৭) ও কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম (১৮)। সিরাজুল ইসলাম জেমস এবার এসএসসি ও রাশেদুল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। আর সোহান লেখাপড়া করে না। গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকালে নিজ বাড়ি থেকে ওই তিনবন্ধু মোটর সাইকেল যোগে কাহালু উপজেলার ইন্দুখুর বাজারে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুপুর একটার দিকে কাহালু উপজেলার মালঞ্চা-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কে মুলার সাঁকো এলাকায় দ্রুতগামী মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সড়ক সংলগ্ন গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে মটর সাইকেলটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং তিনজনই সড়কের উপর ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সিরাজুল ইসলাম জেমস মারা যায়। স্থানীয় লোকজন অপর দুইজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সোহানুর রহমান সোহান মারা যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় রাশেদুল ইসলাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে ওই নিহত দুই বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মরদেহ তাদের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকে মুহ্যমান পরিবেশ। দুই তরুণের স্বজনদের কান্নায় চোখ মুছছেন অনেক প্রতিবেশীও। বেলা ১১টায় ভুস্কুর গ্রামে জানাজা শেষে দুই বন্ধুকে কবরও দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি। আহত আরেক বন্ধু রাশেদুল ইসলামের অবস্থাও ভালো নয়। সে বগুড়া শহীদ জিয়াউর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সোহানুর রহমান সোহান ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ছেলেকে হারিয়ে বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন সোহানের মা মনোয়ারা বেগম। এসময় স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সোহানের মা মনোয়ারা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমি এখন কী নিয়া বাঁচব। আমার সোনারে, আমার জুদুরে তোমরা আইনা দাও।’ বড় ছেলের মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা মুক্তার হোসেন। তাঁকে সান্তনা দিতে গিয়ে কাঁদছেন আত্মীয়-প্রতিবেশীরাও। নন্দীগ্রাম ভাটগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কামাল আজাদ বলেন, শুক্রবার গ্রামের ভুস্কুর মাদ্রাসায় জানাজা শেষে দুই বন্ধুকে পাশাপাশি কবরে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।