মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ে প্লাইবোর্ড তৈরির কারখানার গুদামে লাগা আগুন প্রায় ১৫ ঘণ্টার চেষ্টায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট। গতকাল রোববার দুপুরে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর আজ সোমবার সকাল ৮ থেকে গুদামের ভস্মীভূত মালামাল সরানোর কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এর আগে রোববার দুপুরে গুদামে আগুন লাগার পরে বাতাসের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সম্পূর্ণ কারখানায়। এ আগুনের ফুলকিতে নদীতে রাখা তিনটি ট্রলার পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার জানান, আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রে চলে এসেছে। এখন আর আগুন নেই। সোমবার সকাল থেকে গুদামের ভেতরের পাঠখড়ির ও প্লাইবোর্ড অপসারণ করা হচ্ছে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওই কারখানার নাম সুপার ফরমিকা অ্যান্ড লোমিনেশন লিমিটেড। গতকাল সকাল থেকে কারখানার ওই গুদামে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন। বেলা সোয়া একটার দিকে গুদামে মজুত করা পাটখড়িতে আগুন ধরে গেলে শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে বাতাসের কারণে আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা ব্যর্থ হন। গুদামের পাশেই নদীতে পাটখড়িবোঝাই তিনটি ট্রলার ছিল। গুদামের আগুনের ফুলকি বাতাসের মাধ্যমে ওই ট্রলারগুলোয় পড়লে মালামালসহ ট্রলারও পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। প্রথমদিকে গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, এরপর নারায়ণগঞ্জের আরও চারটি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। আগুনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় কুমিল্লা, ঢাকা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের আরও কয়েকটি দল আসে।রাত সাড়ে আটটায় আগুনের ভয়াবহতা কমতে শুরু করে।সোমবার সকালে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকাণ্ডের স্থান পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়ে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার আজ সোমবার সকাল ১০ টার দিকে বলেন, গতকাল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জ,ঢাকা ও কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভাতে টানা কাজ করেছে। দৃশ্যমান আগুন নিভেগেছো। তবে গুদামের মজুদ করা পাঠখড়ি ও প্লাই বোর্ডে আগুনের ফুলকি রয়েছে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ৪ টি ইউনিট কাজ করছে। পাঠখড়ি ও প্লাইবোর্ডের উপরের স্তরে স্তরে ফুলকি আছে। পানি ছিটিয়ে একটি একটি করে আগুন নির্বাপন করে মালামাল সরাচ্ছে। তবে এ ঘটনায় কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনো নির্নয় করা জায়নি। এ দিকে এ ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট মো. মাসুদুল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাস। এ কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট মো. মাসুদুল আলম বলেন, ইউএনও, গজারিয়া থানার ওসি, ফায়ার সার্ভিসের একজন এ কমিটিতে রয়েছে। কেন, কিভাবে আগুন লাগলো বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে। কারখানাটির শ্রমিকরা জানান, কারখানার গুদামের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে পাটখড়ির মজুত ছিল। গতকাল সকাল থেকে তাঁরা যথারীতিভাবে কাজ করেছিলেন। কারখানার একপাশে সামান্য আগুনের ফুলকি দেখেন তাঁরা। অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু পাটখড়িতে লাগা আগুন মুহূর্তেই সম্পূর্ণ কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে কারখানার ভেতর থেকে শ্রমিকেরা নিরাপদে বেরিয়ে যান। তাঁদের কারখানার পাশে একটি ওয়েল্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে ওয়েল্ডিং করার সময় আগুনের ফুলকি তাঁদের গুদামের পাটখড়িতে এসে পড়েছিল। সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে দাবি তাঁর। কারখানার আগুন নেভাতে গিয়ে ধোঁয়ার কারণে আনসার সদস্য মো. হিরণ (৩২), কারখানার শ্রমিক মাহিম (৩৫), শরিফুল ইসলামসহ স্থানীয় সাতজন আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।