ডাইভারশনে থাকা বা প্রবেশন বলতে বোঝায় কোনো অপরাধীর প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে ও কারাগারে না পাঠিয়ে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ দেয়া। যে সুযোগের সঠিক ব্যবহার করে মুক্তি মিলেছে রাজশাহীর ৪১ শিশু-কিশোরের। পুরুষ্কার হিসেবে মিলেছে বিচারকের হাত থেকে ফুল ও জাতীয় পতাকা। নতুনভাবে কোনো অপরাধে না জড়ানোর কারণে সংশোধনের জন্য প্রবেশনে থাকা ৪১ জনের মধ্যে আদালতে উপস্থিত ৩৫ শিশুর হাতে ফুল ও জাতীয় পতাকা দিয়ে চূড়ান্ত মুক্তি দিয়েছেন রাজশাহীর শিশু আদালত-২। সোমবার (২৫ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে আদালতে এ শিশুদের মামলাগুলোর দীর্ঘ চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রবেশনে থাকার সময় যথাযথ নির্দেশনানুযায়ী সন্তোষজনক আচরণ করায় আদালতের বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান তাদের চূড়ান্ত মুক্তির আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহীতে শিশু আইনে হওয়া মামলার মধ্যে মাদক সেবন ও বহন ছাড়াও মারামারির মতো ঘটনায় ৩৪টি মামলায় আসামি হয়েছিল ৪১ জন। আইনের প্রবেশন ব্যবস্থায় যাদের প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে ও কারাগারে না পাঠিয়ে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ দিয়েছিলেন বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান। প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে দণ্ডিত শিশু-কিশোর বা অন্য কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে কারাগারে না পাঠিয়ে আদালতের নির্দেশে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নিজ বাসায় বা পরিবারের সঙ্গে তাদেরকে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যারা বিচারকের এমন মহানুভবতারও মূল্যায়ন করেছে। তাই তাদের প্রথমবারের মতো অপরাধীর নাম ঘুচিয়ে পূনার্ঙ্গ মুক্তি দিয়েছেন বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান। এ বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রবেশন বলতে বোঝায় কোনো অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে ও কারাগারে না পাঠিয়ে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ দেওয়া। প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে দণ্ডিত শিশু-কিশোর বা অন্য কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে কারাগারে না পাঠিয়ে আদালতের নির্দেশে শর্তসাপেক্ষে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নিজ বাসায় বা পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, গত এক বছরে রাজশাহীর শিশু আদালত-২ এর বিজ্ঞ বিচারক প্রায় ৮০টি মামলায় ৮০ শিশুর কল্যাণে পারিবারিক সম্মেলনের মাধ্যমে ডাইভারশন গ্রহণের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তাকে আদেশ প্রদান করেন। এসব শিশুদের কারো বিরুদ্ধে মারামারির অভিযোগ ছিল, কেউ বা শ্লীলতাহানিও ঘটিয়েছিল। পরে আদালতের আদেশে আমরা বিদ্যমান মামলার বাদী ও শিশুর অভিভাবকের উপস্থিতিতে শিশুর চারিত্রিক, মানসিক, আবেগীয় উন্নতির জন্য উপযুক্ত শর্তসমূহ আরোপ করি। যার মধ্যে ছিল বই পড়া, বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, অভিযোগকারীর সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিসহ আরও বেশকিছু শর্ত। আর ডাইভারশনের মেয়াদ সম্পন্ন এবং আরোপিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন করায় বিজ্ঞ আদালত আজ (সোমবার) ৪১ জন শিশুকে চূড়ান্ত মুক্তি দিলেন। এসময় তাদের মধ্যে উপস্থিত ৩৫ জনের হাতে গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়। পরে এসব শিশু-কিশোররা খুশিমনে বাবা-মায়ের সঙ্গে আদালত থেকে বাড়ি ফিরে যায়।