সুনামগঞ্জ পাউবো হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ৯৮ ভাগ শেষ করার এমন দাবি প্রত্যাখান করে সংবাদ সম্মেলন করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি। সোমবার দুপুরে দৈনিক সুনামকণ্ঠ কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মলন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের নেতারা সাংবাদিকদের জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের এক মাসেও বাঁধের কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। এখনো অনেক উপজেলায় বাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। বেশিরভাগ উপজেলায় বাঁধের ঢালে ঘাস লাগানো হয়নি। ক্লোজারে জিও ব্যাগ লাগানো হয় নাই দেওযা হয়নি বস্তা বা বাঁশের বেড়া। তড়িগড়ি করে বাঁধের কাজ করায় বাঁধের কম্পেকশন ও দুরমুজ হয়নি । বাঁধের কাজের এমন অবস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ড পক্ষ থেকে যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেখানো হচ্ছে তা বাস্তবের সাথে মিল নেই বলে জানায় সংগঠনি। সংবাদে সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরি সভাপতি অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার দাশ রায়, এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি চিত্ত রঞ্জন তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেন্দ্র কুমার দে মিন্টু, জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল প্রমুখ লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, চলতি বোরো মৌসুমে ফসলের সুরক্ষায় হাওরে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দে ৭৩৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। নীতিমালা অনুযায়ি অর্থবছরের ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা। নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর নিয়মরক্ষার্থে কয়েকটি বাঁধে লোক- দেখানো কাজ উদ্বোধন করা হয়। সর্বশেষ মার্চ মাস পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু করা হয়েছে। ডিসেম্বরে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারিতে যে বাঁধের কাজ শেষ হবে সে বাঁধ আগাম বন্যার চাপ সমলাতে সক্ষম হবে। কিন্তু মার্চ মাসে যে সব বাঁধের কাজ শুরু করে নিয়মরক্ষার কাজ করা হয়েছে আগাম বন্যা আসলে প্রথমেই সে বাঁধগুলো ভেঙ্গে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে গেল বছরের অক্টোবর নভেম্বর মাসে যে জরিপটি পরিচালনা করা হয় তাতে দেখা যায় অনেক বাঁধের কিলোমিটারের পর কিলোমিটার মাটি ভরাটের প্রয়োজন নেই। কিন্তু প্রাক্কলনের সময় অক্ষত বাঁধেতে ক্ষতিগ্রস্থ দেখিয়ে সরকারের টাকা নয়-ছয়ের কাজ সেখান থেকে শুরু হয়। হাওরে অনেক বাঁধ রয়েছে যেখানে মাটি ভরাট না করে শুধু দুর্বাঘাস পরিস্কার করে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। সরকারের বেধে দেওয়া ২৮ ফেব্রুয়ারি কোন বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। সে সময় মাত্র ৩০-৩৫ ভাগ কাজ হয়। এরপর পাউবো ও প্রশাসন ঘোপনে ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বর্ধিত করেন। সে সময়েও কাজ শেষ হয়নি। এখন পাউবোর পক্ষ থেকে ৯৮ ভাগ কাজ হয়েছে দাবি করা হচ্ছে যা ভিত্তিহীন। সংগঠনের পক্ষ থেকে ২২ মার্চ সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় দিরাই উপজেলার ২৭ ও ২৮ নং পিআইসির কাজ অসমাপ্ত রেখে এই পিআইসি স্থলে আরও ৪টি প্রকল্পে নেয়া হয়েছে। কৃষকরা এর প্রতিবাদ জানালে পাউবো কর্তৃক তাদের মামলা দিয়ে হয়রাণি করা হয়। জগদল ইউনিয়নের অনেকগুলো বাঁধ রয়েছে যার কাজ এখনও শেষ হয়নি। তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরে ৩৩ ও ৩৪ নং পিআইসিতে এখনও কাজ চলছে ৬৩, ৭৮ ও ৭৯ নং পিআইসির একই অবস্থ। জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের ২৬ নম্বর পিআইসির ঘনিয়ার বিলের ক্লোজারটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁধ। প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়ে সম্প্রতি কাজটি সমাপ্ত ঘোষণা করলেও ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁধটি। এদিকে ঘনিয়ার বিলের বিপরীতপাড়স্থ শনি হাওরের ২ নম্বর পিআইসি নান্টুখালী ক্লোজারটি প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে কাজ শেষ করা হলেও। ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় আবারো ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাঁধের দ্বিতীয় ধাপের কাজটির ৫০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। শাল্লা, মধ্যনগর, ধর্মপাশা উপজেলার অনেক বাঁধে এখনো কাজ চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। অনতি বিলম্বে হাওরের বোর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের তাহাদা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। হাওরে বিপর্যয় ঘটলে এর দায় কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটিকেই নিতে হবে বলে জানায় সংগঠনটি।