গাজীপুরের কাপাসিয়ার চাঁদপুর বাজারে আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারানো দোকানীদের অনুদানের টাকায় ভাগ বসিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। সম্প্রতি গাজীপুর জেলা পরিষদ থেকে ওই বাজারের ১৮ জন ব্যবসায়ীর নামে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ টাকা বুঝে পান নি কেউ। এমনকি আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানী অনুদানের টাকা না পেলেও বাজারে দোকান নেই, কিংবা আগুন লাগেনি এমনসব ব্যক্তিরাও অনুদানের টাকা পেয়েছেন। গত বছরের ০৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাপাসিয়ার চাঁদপুর বাজারে আগুন লেগে ১৬ ব্যবসায়ীর দোকান পুড়ে এক কোটি টাকার বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল। গাজীপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সুপারিশে ‘দৈবদুর্বিপাক, মানবিক বিপর্যয়ের শিকার ব্যক্তিগণের মাঝে অনুদান’ প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুর বাজারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ ১৮ ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। তাদের মাঝে ৪ জনের কাছ থেকে ওই বাজারের ব্যবসায়ী নেতারা ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই বাজারের ব্যবসায়ী সুকোমল চন্দ্র দাস জানান, গাজীপুর জেলা পরিষদ থেকে অনুদানের টাকার চেক আনতে গেলে বাজার ব্যবসায়ী সভাপতি হযরত আলী দর্জি, সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোলাইমান মোড়ল তাদের চারজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা করে দাবি করেন। এ সময় তারা ওই টাকা দিতে আপত্তি করলে তাদের চেক আটকে রেখে দাবিকৃত সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের শর্তে চেক যার যার হাতে ফিরিয়ে দেন। পাশ্ববর্তী দোকানী শীতল শীল জানান, পুড়ে যাওয়া ঘরের টিনেরচাল দিয়ে পানি পড়লেও অনুদানের টাকা থেকে নেতারা ১০ হাজার টাকা কেড়ে নিয়েছেন। কনফেকশনারি দোকানী তাপস চন্দ্র দাস জানান, তাদের চারজন ব্যবসায়ীর ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে এই অজুহাতে নেতারা ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। অপর এক ব্যবসায়ী ফজলুল হকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করে নেন নেতারা। তবে ওই বাজারের ফলের দোকানী মোঃ হাবিজউদ্দিনের ছেলে মোঃ শাকিল জানান, আগুনে তাদের দোকানের প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার ক্ষতি হলেও এই অনুদানের তালিকায় তাদের নাম নেই। তাছাড়া মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ নয়জন দোকানীর কাছ থেকে নেতারা জেলা পরিষদ কার্যালয়েই চেক আটক করে দুই হাজার টাকা করে আদায় করেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানী জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়ে আর্থিক দুরবস্থার কারণে নেতাদের টাকা দিতে না পারায় তার চেক আটক করেন তারা। পরে বাড়ি ফিরে কলা বিক্রি করে তাদের দুই হাজার টাকা দিলে তারা তার চেক হস্তান্তর করেন। ওই বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, ব্যবসায়ী সমিতির চাঁদা সংগ্রহকারী ইউসুফ শিকদারের বাজারে কোনো দোকান নেই। সিনিয়র সহ সভাপতি রমজান আলীর দোকানের ধারে কাছেও আগুনের কোনো তাপ লাগে নি। আর সিরাজুল ইসলাম নামে কোনো দোকানীর অস্তিত্ব নেই ওই বাজারে। তাদের প্রত্যেকের নামে বরাদ্দের টাকাও নেতাদের পকেটেই বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে ওই বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ রমজান আলী জানান, চারজন ব্যবসায়ীর ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে বিধায় তাদেরকে আংশিক টাকা দেওয়া হয়েছে। সিরাজুল ইসলাম নামে কোনো ব্যবসায়ীকে তিনি চিনেন না। আর বাকী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা করে নিয়েছেন। এসব কিছুই সভাপতির নেতৃত্বে হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হযরত আলী দর্জি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার হোসেন মোল্লা বলেন, অনুদানের টাকায় অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।