দেশে সারাবছর সেমাইয়ের যে বেচাকেনা হয়, এরচেয়ে প্রায় দশ গুণ বেশি বিকিকিনি হয় ঈদ-উল ফিতরে। তাই রমজান মাসকে সেমাইয়ের মৌসুম বলা হয়ে থাকে। ঈদেরদিন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে সেমাই খাওয়ার পুরোনো রেওয়াজ আজও বদলায়নি। তাই আসন্ন ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে অন্যান্য বছরের মতো এবারও ব্যস্ততা বেড়েছে বরিশালসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সেমাই তৈরির কারখানাগুলোতে। সেমাই কারখানার কারিগর ও শ্রমিকদের এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দম ফেলার ফুসরত নেই। সরেজমিনে বিভাগের সবচেয়ে বড় ও নামকরা ‘বিনা লাচ্ছা সেমাই’ তৈরির কারখানা ঝালকাঠির পৌর এলাকার কাঠপট্টি কলাবাগানের সফল নারী উদ্যোক্তা সেলিনা বেগমের সেমাই কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, রমজান মাসের শুরু থেকেই ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে সেলিনার কারখানায় ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। তার কারখানার সেমাই জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে পাশের জেলাগুলোতে। ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক উভয়পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে সেমাই। সফল নারী উদ্যোক্তা সেলিনা আক্তার বলেন, কোনোরকম রং ও কেমিক্যাল ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কারখানার শ্রমিকরা সেমাই তৈরি করছেন। প্রথমে ময়দা দিয়ে সেমাই তৈরি করে তা রোদে শুকানো হয়। পরবর্তীতে কারখানার মধ্যে বড় লোহার তৈরি করাইতে তেল দিয়ে এসব সেমাই ভাজা হয়। এরপর বিক্রির জন্য প্যাকেটজাত করে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেলিনা বেগমের স্বামী হুমায়ুন কবির বিনা লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘদিন থেকে ব্যাপক সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। বিগত ছয় বছর আগে হুমায়ুন কবিরের মৃত্যুর পর ঠিকমতো শ্রমিকদের বেতন দিতে না পারার কারণে দীর্ঘদিন কারখানাটি বন্ধ থাকে। এতে করে দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসার নিয়ে সেলিনার সংসারে নেমে আসে চরম অভাব অনটন। এরপর বেঁচে থাকার তাগিদে স্বামীর মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যাওয়া সেমাই তৈরির কারখানাটি সেলিনা বেগম নিজে উদ্যোক্তা হয়ে নতুন করে চালু করেন। স্বপ্ন দেখেন একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। ইতোমধ্যে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। প্রথমে মাত্র একটি মেশিন দিয়ে তার কারখানায় সেমাই তৈরি করার কার্যক্রম শুরু করেন সেলিনা। মাত্র একবছরের মধ্যে কঠোর পরিশ্রমের আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে এখন একাধিক মেশিনে সেমাই তৈরি করা হয়। ইতোমধ্যে নিজের পাশাপাশি বিধবা সেলিনা বেগম অন্যদেরও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তার সেমাই তৈরির কারখানায় এখন নিয়মিত ২০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করে স্বাবলম্ভী হয়েছেন। সফল নারী উদ্যোক্তা সেলিনা বেগম এখনও নিজ হাতে কারখানায় কাজ করে সময় কাটাচ্ছেন। সারাক্ষণ নিজে যেমন সাদা সেমাইতে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন, তেমনি তার সাথে অন্যান্য নারী ও পুরুষ শ্রমিকরাও একই স্বপ্নে আপন খেয়ালে কাজ করছেন।