পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নের বাঐখোলা গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান সিরাজুল ইসলাম। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে চাকরি করে কৃষক পরিবারে সমৃদ্ধি বয়ে আনার। কিন্তু ১৯৮৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। বাবার জমি থাকলেও চাষাবাদ করে সফল হতে পারেননি। ২০০৪ সালে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ৩টি উন্নতমানের গাভী কেনেন সিরাজুল। গরুটি ৩টি বাছুর জন্ম দেয়। এর মধ্যে ২টি ছিল গাভী। এভাবেই গরু পালন করতে থাকেন তিনি।
এভাবে কয়েক ডজন গরুর মালিক হন সিরাজুল। লাভজনক হওয়ায় তিনি খামারের দিকে মনোযোগ বাড়াতে থাকেন। গবাদি পশুর ওপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার খামার। বর্তমানে তার খামারে দেড় শতাধিক গাভী আছে। গরু থেকে প্রতিদিন সাড়ে ১২শ থেকে ১৩শ লিটার দুধ সংগ্রহ করছেন তিনি। তার আবাদকৃত প্রায় ১২-১৪ বিঘা খেতে এখন শুধু গরুর জন্য ঘাস চাষ করা হয়। পাবনার টেবুনিয়া-চাটমোহর সড়কের বাঐকোলা গ্রামে সিরাজুল বিশাল গরুর খামার থেকে দুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়ায় তিনি ফারুক ডেইরী নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তার নিজ খামার ও খামারীর গরু থেকে প্রতিদিন ২৫ হাজার থেকে ২৭ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করছেন তিনি।
তার এই ফারুক ডেইরীতে চাটমোহর, ভাঙ্গুড়ায় ১৪টি দুধ ক্যালেকশন সেন্টার রয়েছে। এই দুধ পাবনা জেলার ঐতিহ্যবাহী শ্যামলী দই ভান্ডার ও বনলতা সুইটসসহ জেলার বিভিন্ন হোটেলে দুধ বিক্রি শুরু করেন তিনি। বর্তমানে ঢাকা, রাজশাহী ও বরিশালে চিলিং সেল সেন্টার গড়ে তুলেছেন তিনি। এখান থেকে ঢাকা, রাজশাহী ও বরিশাল এলাকার মানুষ দুধ ক্রয় করে থাকেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহীনি সাভার ক্যান্টনমেন্টে দুধ সরবরাহ করছেন।
সফল এই উদ্যোক্তা মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে ১৩তম ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে অংশ নিয়ে দেশের দ্বিতীয় স্থানে উত্তীর্ণ হয়ে সিটি অ্যাডওয়ার্ড পেয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে দেড়শ কর্মচারীসহ প্রায় ১২শ জন খামারী রয়েছেন। তিনি বলেন, এক দিকে যেমন মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অন্যদিকে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি।
পাবনা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার চালুকদার বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম শুধু ডেইরি খামারিই নয় তিনি ফারুক ডেইরী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। সারাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে খামার পরিচালনা করে সফল হওয়ার একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনও করেছেন। ২০১৮ সালে ১৩তম ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে অংশ নিয়ে দেশের দ্বিতীয় স্থানে উত্তীর্ণ হয়ে সিটি অ্যাডওয়ার্ডও পেয়েছেন তিনি। সফল এই উদ্যোক্তা মো: সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, ব্যক্তিপর্যায়ে স্বল্প পরিসরে এ কাজ করলেও, তার খামারের বিপুল পরিমাণ পয়ঃবর্জ্য ফেলে দিতে হচ্ছে। সরকারি সহায়তা পেলে তার নিজের খামারের এবং আশেপাশের খামারের বিপুল পরিমাণ বর্জ্য দিয়ে তিনি বড় পরিসরে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা তিনি জানান।
পাশাপাশি জৈব সার উৎপাদন করে বাণিজ্যিকভাবে তা বাজারজাত করার পরিকল্পনাও আছে তার। এভাবে পরিকল্পিতভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট, বিদ্যুৎ প্লান্ট এবং জৈব সার উৎপাদন করে পুরো এলাকায় তা বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করতে পারলে এসব খামারকে আরও অনেক লাভজনক করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তিনি। তবে এজন্য সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।