লালমনিরহাটের স্বতী নদী নামে একটি নদীর পাড়ে বাঁশের বেড়া, খড় আর টিন দিয়ে তৈরি করা একটি ঝুপড়ি ঘর। সেই ঘরেই দুই সন্তান ও গরুর সঙ্গে বসবাস ষাটোর্ধ্ব কমরউদ্দিন ও বাচ্চাই বেগম দম্পতির। ঘরে আসবাবপত্র বলতে বাঁশের একটি চৌকি, রান্নার দু-একটা বাসন ছাড়া সেখানে আর কিছুই নেই। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের বারাজান এলাকার স্বতী নদী পাড়ে দির্ঘদিন থেকে তাদের বসবাস। সরেজমিনে বারাজান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দরিদ্রতার কারণে জরাজীর্ণ ঘরে অসুস্থ স্বামী-সন্তানদের নিয়ে গরুর সঙ্গে বসবাস করছেন ভূমিহীন কমরউদ্দিন ও বাচ্চাই বেগম দম্পতি। ওই ঝুপড়ি ঘরের একদিকে বিছানা অন্যদিকে খড় বিছানো গরুর থাকার জায়গা। একদিন কাজ না জুটলে খাবার জোটেনা এই পরিবারের। তাদের এই অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কান্না জড়িত কণ্ঠে বাচ্চাই বেগম বলেন, ‘অভাবের কারণে গরুর সঙ্গে একই ঘরে থাকতে হয়। রান্না থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয় ওই ঘরটিতে। আমার স্বামী অসুস্থ। তিনি কাজ করতে পারেন না। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি, ছেলেটা অন্যের কাজ করে। মা-ছেলেতে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলে। অনেকে সরকারি ঘর পাইলেও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি সেই সরকারী ঘর। কমরউদ্দিন বলেন, ‘খাস জমিতে কোনো রকম একটা ঘর করে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে থাকি। পাশেই আমাদের একটা গরুও থাকে। ওই ঘরেই থাকা খাওয়া সব করতে হয় আমাদের। গরুর মুত্র আর বিষ্ঠায় দুর্গন্ধে থাকা যায় না। এই অবস্থায় বাড়িতে কোনো আত্মীয় আসতেও পারে না। সহায় সম্বল কিছুই নেই আমার। শুধু ওই গরুটাই আছে। সরকার একটা ঘর দিলে বাকি জীবনটা কিছুটা হলেও আরামে থাকতে পারতাম। চলবলা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ বলেন, এই দম্পতি ভূমিহীন। তাদের চার মেয়ে এক ছেলে। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তারা। আর ১৬ বছরের এক ছেলে ও ১২ বছরের এক মেয়েসহ ঝুপড়ি ঘরে থাকেন বাচ্চাই-কমরউদ্দিনের পরিবার। সরকারি বিধি মোতাবেক তারা সরকারি ঘর পাওয়ার যোগ্য কিন্তু নামের তালিকায় তাদের নাম দেয়ার পরও অদৃশ্য কারনে তাদের নাম বাদ হয়ে যায়। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, বিষয়টি জানার পর ওই পরিবারের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত পরিবারটির পুনর্বাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।