ধর্ষণ ও গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে তসলিমউদ্দিনকে আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যাবজ্জীবন সাজা দেন। এরপর নিজের পরিচয় গোপন করে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আত্নগোপনে ও পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না বৃদ্ধ তসলিমউদ্দিনের (৫২)। অবশেষে এলিট ফোর্স র্যাব-৩'র সহযোগিতায় তাঁকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করেছে খানসামা থানা পুলিশ। ধৃত তসলিমউদ্দিন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার গোয়ালডিহি ইউনিয়নের দুবলিয়া গ্রামের আমিজউদ্দিনের ছেলে। খানসাসা থানা পুলিশ গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২২ বছর ধরে ছদ্মবেশে বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার আড়ালে আত্নগোপনে ছিলেন তসলিমউদ্দিন। তাঁকে নারায়ণগঞ্জের গাউসিয়া মার্কেট সংলগ্ন ফলপট্টি এলাকায় গত ২৭ মার্চ বুধবার এলিট ফোর্স র্যাব-৩'র সহযোগিতায় থানা পুলিশ তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। থানা পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, তসলিমউদ্দিন ২০০০ সালে উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নে 'প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ' নামে একটি এনজিওতে সুপারভাইজার হিসেবে চাকুরি করতেন। ফলে তিনি ওই ইউনিয়নের ৭টি বিদ্যালয়ের ১৪ জন শিক্ষকের সুপারভাইজার ছিলেন। তারই অধীনে ভিকটিম বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ' কর্তৃক নিয়োগকৃত শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই কর্মসূচির আওতায় চাকুরিরত থাকার সুবাদে তাঁদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। তবে তসলিম বিবাহিত ও ২ সন্তানের জনক ছিল। এ কথা ভুক্তভোগী শিক্ষিকা জানতেন না। একপর্যায়ে তসলিম মিথ্যে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এতে ভুক্তভোগী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি তসলিমকে জানালে, তিনি তা অস্বীকার করেন ও গর্ভের ভ্রুণ নষ্ট করার জন্য চাপ দেন। এতে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা সম্মত না হয়ে তাঁকে বিয়ে করতে চাপ দেন। এ বিষয়টি ভুক্তভোগী তসলিমের পরিবারকে জানান। একপর্যায়ে তসলিম নিজেকে বিবাহিত দাবি করে ও ভিকটিমকে বিয়ে করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে যায়। এর প্রতিশোধ নিতে প্রতারণা করে ভুক্তভোগীকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে গর্ভপাত করান। এসময় তিনি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষিকার পরিবার বিগত ২০০২ সালে ধর্ষণসহ ভ্রুণ নষ্ট করার অপরাধে পেনাল কোডের ৩১৩ ধারায় তসলিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে খানসামা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালে দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকেই তসলিম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে যান। তিনি গ্রেফতার এড়াতে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন এবং ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেঁচে নেন। এভাবে তিনি চলে যান আত্নগোপনে। খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী তসলিমউদ্দিন ২২ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। র্যাবের সহযোগিতায় তাঁকে আটক করে গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।