পবিত্র রমজান মাস শেষ হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। রমজান শেষ হওয়া মানেই ঈদুল ফিতর।ঈদ সামনে রেখে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ বিপণিবিতান গুলোতে বাড়তে শুরু করেছে লোকসমাগম। কোনো কোনো দোকানের কর্মী ভালো বিক্রির কথা জানালেও কম বিক্রির কথাও জানাচ্ছেন কেউ কেউ। তবে বেশির ভাগ বিক্রেতাদের দাবি, ছুটির দিনে কেনাবেচার যে চাপ থাকার কথা তা তুলনামূলক কম। সামনে বিক্রি আরও বাড়বে বলে এমন আশা করছে বিক্রেতারা। যারা কেনাকাটা করতে এসেছেন, তাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। অনেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন।ক্রেতারা বলছেন, শুরুর দিকে এলে ভালো ডিজাইন পাওয়া যায়। শেষের দিকে পোশাকের সঠিক সাইজ পাওয়াটা মুশকিল। ঈদের কেনাকাটা এগিয়ে রাখতে শপিংমল-বিপণিবিতানে ঢু মারছেন তারা। সামনে আরও ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করে তিনি বলেন, ঈদের এখনো বেশ কয়েক দিন বাকি। এখনো বেতন-বোনাস হয়নি চাকরি জীবিদের অনেকের। আগামী দিন গুলোতে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করি।
কালীগঞ্জে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠছে ঈদের বাজার। নিজের ও প্রিয় জনদের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে শহরের মার্কেট এবং শপিংমল গুলোতে বেড়েছে ক্রেতার ভিড়। বিক্রেতারা আশা করছেন রমজানের বাকি দিন গুলোতে তাদের বিক্রি ভালো হবে। কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি মার্কেটের দোকানে ভীড়। এ ভিড়ের ঝাপটা এসে লেগেছিল সড়ক গুলোতে। কালীগঞ্জ শহরের মধ্যে সব সময় রিকসা ও ইজিবাইকের জ্যাম লেগেই আছে। তরুণীদের জন্য এবার সারারা, গাউন, লম্বা স্কার্ট, লম্বা কামিজ সব মার্কেটেই ভালো চলছে। গাউনের মধ্যে ফ্লোর টাচ বা পায়ের পাতা ছোঁয়া গাউনের চাহিদা বেশি। কেউ কেউ লম্বা গাউনের সঙ্গে বাহারি ওড়নাও পছন্দ করছে।বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে অনেক শিশুরা জানায়, গাউন কিনতে এসেছে, ভালোভাবে উচ্চারণ করতে না পারলেও বোঝা গেল সে ফ্লোর টাচ গাউনই কিনবে। স্মারটেক্সে গাউন রয়েছে হরেক দামের। এ ছাড়া সিল্কের সঙ্গে নেটের গাউন চলছে ভালো।জমে উঠেছে ঈদের পোশাকের কালীগঞ্জের প্রতিটি মার্কেট। দোকান গুলোতে ক্রেতার ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। তবে এখনও পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে পোশাকের দাম অনেক বেড়েছে বলে ক্রেতারা দাবি করলেও বিক্রেতারা সেটি মানতে নারাজ।
কালীগঞ্জ শহরের রিমঝিম গার্মেন্টের কর্মী আবদুস সামাদ বলেন, ভারতীয় পোশাকের কারণে দেশি পোশাকের চাহিদা অনেক কম। তাছাড়া ভারতীয় পোশাকও এখন দেশে খুব বেশি বিক্রি হয় না। কারণ অনেকেই এখন ঈদ শপিংয়ে ভারত চলে যান। ঈদের পোশাকের দাম বেশি সম্পর্কে আবদুস সামাদ জানান, পোশাকের দাম এবার খুব বেশি বাড়েনি। তবে ভারতীয় পোশাক আমদানিতে ব্যয় কিছুটা বাড়ায় সামান্য দাম বেড়েছে। তিনি জানান, ‘বাহুবলী’ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায়।এবার শাড়ির বাজার এরইমধ্যে জমজমাট হয়ে উঠেছে। এ বছর শাড়ির ডিজাইনে কিছুটা নতুন স্টাইল ও বৈচিত্য আসাতে বছরের শুরু থেকেই শাড়ির বাজার ফ্যাশনেবলদের নজর কেড়েছে। তাই পহেলা বৈশাখ ও বসন্তের প্রথম দিনের জন্য শাড়ি বিক্রি হয় বেশি। এ ধারাবাহিকতায় এবার ঈদেও শাড়ির বাজার ভালো। বাজার ঘুরে দেখা গেছে দুই রঙের শাড়ির প্রচলন বেশি। যেমন লাল-সাদা, খয়েরি-সাদার মিশেলের শাড়ি গুলো চলছে ভালো। তাছাড়া যে যানজট তাতে শপিংয়ের আনন্দই নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া টেইলার্স,গার্মেনস্, কসমেটিক,ছিটকাপড়রে দোকান, জুতার দোকান, স্বর্ন, ঘড়ি, টুপি,জায়নামাজ, আতর ও সুরমা, পানজাবি, হাড়ি পাতিলের দোকানসহ বিভিন্ন দোকারে রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। যে পরিবারের যা প্রয়োজন সে তাই কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
কালীগঞ্জের বিভিন্ন মার্কেটে কেনাকাটা চলছে পুরোদমে দোকান ব্যবসায়িদের একটু বিশ্রাম নেবার সুযোগ নেই। প্রতিদিন সকাল ৭ টার পর থেকে রাত ১ টা পর্যন্ত দেদারছে ঈদের কেনাবেচা চলছে। ক্রেতারা হাসি মুখে কিনছে তাদের পছন্দের জিনিস। শহরের মধ্যে জানজট ও বেড়েছে। আবার পুলিশের টহল ও বাড়ানো হয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সর্ব প্রকার দোকানে ভীড় লেগেছে। দোকানে গেলে মনে হচ্ছে তাদের কথা বলার সময় নাই ঈদ যত নিকটে আসছে ছিটকাপড় ও দর্জি দোকান গুলোর কারিগরদের ব্যস্ততা সমান তালে বাড়ছে। ঈদের নতুন পোশাক তৈরিতে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। দূরের গ্রাম থেকে শহরে আসা পোশাক তৈরির কারিগরদের বাড়িতে যাওয়ার সময় হয়ে ঊঠছে না। দিন-রাত কাজ আর কাজ। চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। ক্রেতার চাহিদা মতো পোশাক তৈরিতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের দর্জি দোকানের কারিগররা এখন মহাব্যস্ত দিন পার করছেন।
জাহাঙ্গির হোসেন দর্জি জানান, ৩০ বছর ধরে দোকানে কাজ করছেন। সারাবছর দোকানে কাজ থাকে তবে পবিত্র ঈদ এবং বড় পূজার আগে কাজ বেড়ে যায় কয়েকগুণ বেশি। বিশেষ করে শবে বরাতের পর থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত কাজের অধিক চাপ থাকে। পোশাক তৈরির কারিগরদের খাওয়া ঘুম থাকে না। এ সময় অতিরিক্ত পরিশ্রম ও বিশ্রামহীনতার কারণে অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়েন। সারাবছর তেমন একটা কাজ না থাকলেও ঈদের আগে কাজ বেড়ে যায়। কারিগরেরা অতিরিক্ত কাজ করে বাড়তি পয়সাও রোজগার করতে পারেন। এ সময় দিনরাত পরিশ্রম করে এক এক জন কারিগর প্রতিদিন দেড় হাজার টাকাও আয় করে থাকেন। ফলে কারিগরদের কঠোর পরিশ্রম হলেও বাড়তি রোজগারের কারনে তাদের তেমন একটা কষ্ট মনে হয় না।কালীগঞ্জ শহরের অনেক শহরের কারিগর জানান, তাদের বাড়ি উপজেলার শহর থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে। ঈদের কাজের ব্যস্ততায় বাড়িতে গিয়ে আবার ফিরে আসতে সময় অপচয়ের কারনে নির্দিষ্ট সময়ে অর্ডারী পোশাক দিতে কষ্টকর হবে যে কারণে কারখানার সকল কারিগরদের বিগত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ি যাওয়া বন্ধ। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে খাওয়া-ঘুম চলছে কারখানাতেই। এমনভাবে চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। শহরের আনিস টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী আনিসুর রহমান জানান, লাইলাতুল বরাতের পর থেকে দোকানে ঈদের কাপড় তৈরির ভিড় শুরু হয়েছে। তার দোকানে মোট ১৫ জন কারিগর কাজ করে। তারা দিন রাত বিরতিহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, গার্মেন্টস এর তৈরিকৃত পোশাক বিক্রেতাদের দোকানে ভিড় থাকলেও কাটা কাপড়ের দোকানে ভিড়ের কমতি নেই। এখানে সব বয়সী ক্রেতারা ভিড় করেন। তবে বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা তাদের পোশাকের ইচ্ছামতো ডিজাইন করে তৈরি করে নিতে পারেন। তাই ঈদের সময় তাদের ব্যস্ত সময় কাটে। তাছাড়াও নিম্ন্নবিত্ত শ্রেনীর মানুষেরা কম পয়সায় নতুন জামা কাপড় তৈরির জন্য তাদের দোকানে আসেন।