পূর্ব সুন্দরবনে আজ ১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে মধু সংগ্রহের যাত্রা। ১৫ মার্চ থেকে বন বিভাগ মধু সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ করলেও মৌয়ালরা পাস নেয়নি। ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহের লক্ষ নিয়ে নৌকা মেরামত, মহাজনের কাছ থেকে দাদন নেওয়াসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন মৌয়ালরা। চলতি মৌসুমে বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে দুই সহস্রাধিক মৌয়াল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে যাবেন বলে ধারণা করছে বনবিভাগ। শরণখোলা রেঞ্জে ৬০০ কুইন্টাল মধু ও ২০০ কুইন্টাল মোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন বনবিভাগ। গত বছর এ রেঞ্জে আহরণ হয়েছিল ৫৪১ কুইন্টাল মধু ও ১৬১ কুইন্টাল মোম। এ খাত থেকে বনবিভাগ প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় করেন। মধু সংগ্রহের সময় মৌয়ালরা নির্দেশনা অমান্য করেল তার বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। বনবিভাগ সূত্র জানায়, গোটা সুন্দরবনে ১৫দিন এগিয়ে ১৫ মার্চ থেকে বন বিভাগ পারমিট (অনুমোতি) দেয়া শুরু করলেও পূর্ব সুন্দরবন এলাকার মৌয়ালদের তাতে আগ্রহ নেই। কারণ এই আগাম সময়ে পূর্ব সুন্দরবনের গাছে ফুল ফোটেনা। এই সময়টাতে পশ্চিম সুন্দরবনের গাছে আগাম ফুল চলে আসায় সাতক্ষীরা, কয়রা এলাকার মৌয়ালরা যায় মধু সংগ্রহে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বনের কোনো কোনো অংশের গাছে আগাম ফুল চলে আসে। এ কারণে গত তিন বছর ধরে আগাম আসা ফুলের মধুটা সংগ্রহের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেয় বনবিভাগ। শরণখোলা উপজেলার গোলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৌয়াল আসলাম হাওলাদার, খুড়িয়াখালী গ্রামের আউয়াল খান, উত্তর সাউথখালী গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেন, শরণখোলা গ্রামের জালাল মোল্লা ও বগি গ্রামের ছগির হোসেন বলেন ৭০-৮০ টি নৌকায় একত্রে সহস্রাধিক মৌয়াল আগামীদিন রবিবার ১ এপ্রিল মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে যাত্রা করবেন। তারা বলেন ১৫ দিন আগে সুন্দরবনে গিয়ে কোন লাভ নেই কারণ বনে মধুর চাক পুরোপুরি তৈরি হয়নি। দীর্ঘ ১০/১২ ধরে আমরা ১এপ্রিল মধু সংগ্রহ করতে সুন্দরবনে যাই। এ সময় বৃষ্টি হলে ফুল বেশি ফোঁটে এবং রৌদ্র থাকলে ফুল শুকিয়ে যায়। ফুল ভালো ফুটলে মধুর পরিমান বেশি হয়। এক একটি চাক থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি মধুর সংগ্রহ করা যায়। মৌয়ালরা আরো জানান, গতবছর তাদের দলের প্রত্যেক সদস্য দুই মণ করে মধু পেয়েছিলেন। পাস সংগ্রহ, সরকারি রাজস্ব এবং খাওয়া খরচ মিলিয়ে মৌসুমে তাদের একেকজনের খরচ হয় ১২হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর দুই মণ মধু বিক্রি করে একেকজন পেয়েছিলেন ৬০হাজার টাকা। এবছরও আগাম বৃষ্টি হওয়ায় আশানুরুপ মধু পাবেন বলে মনে করছেন তারা। মধু ব্যবসায়ী মো. রাসেল আহমেদ ও জালাল মোল্লা জানায়, গতবছর তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এবছরও একই পরিমাণ বিনিয়োগের আশা আছে। গতবছর প্রায় ১৪ মণ মধু বিক্রি করেছি। প্রতিকেজি মধু খুচরা বিক্রি হয়েছে প্রকার ভেদে ১হাজার টাকা থেকে ১২’শ টাকা পর্যন্ত। গত তিন বছর ধরে সুন্দরবনে আগাম মধুর পাস দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনের সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের যে মধু সেটা আসে খলিসা এবং গরাণ ফুল থেকে। পশ্চিম সুন্দরবন অঞ্চলের খলিসা এবং গরাণ গাছে আগাম ফুল চলে আসে। কিন্তু আমাদের পূর্ব সুন্দরবনে এই সময় খলিসা ও গরাণ গাছে ফুল আসেনা। পুরো এপ্রিল মাস খলিসা ও গরাণ ফুলের মধু সংগ্রহ হয়। মে মাসজুড়ে থাকে কেঁওড়া ও ছইলা ফুল। এর পর জুন মাসে শুরু হয় গেওয়া ফুলের মধু আহরণ। শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক মৌয়ালকে ১৪দিনের জন্য পাস দেওয়া হয়। বনে প্রবেশ করার পর মৌয়ালদের মুধ আহরণে ৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয় । তার মধ্যে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহের সময় মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকুন্ড, মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন না। এই নির্দেশনা অমান্য করেল তার বিরুদ্ধে বন আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিসার শেখ মাহবুব হাসান জানান, ১৫ মার্চ থেকে মধু আহরনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও আজ রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত কোনো পাশ হয়নি। আগামী দিন(সোমবার) থেকে মৌয়ালরা পাশ নিয়ে সুন্দরবনে যাবে বলে জানিয়েছেন। চলতি মৌসুমে ৬০০ কুইন্টাল মধু ২০০ কুইন্টাল মোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুন্দরবনে পর্যাপ্ত ফুল ফোটেনি বলে মৌয়ালরা আগাম বনে যায়নি। ১৫ মার্চ থেকেই মূলত মধু আহরণের পারমিট দেয়া শুরু হয়েছে। পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের মৌয়ালরা ওই সময় থেকেই মধু সংগ্রহ করছেন। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের পূর্ব সুন্দরবনের গাছে ফুল একটু দেরিতে আসে। যার কারণে দুই বিভাগে মধু সংগ্রহ একই সময় শুরু হয় না।