বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ডাকাতি করতে আসা সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারীদের হামলায় ২ আনসার সদস্যসহ ৫ নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন। বুধবার (০৩ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্তর-পশ্চিম কোনের মেটেরিয়াল ইয়ার্ডের ৩নং ডিউটি পোস্ট এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন, নিরাপত্তা সুপারভাইজার আকরাম (৫৫), সাইদুল ইসলাম (৩৭), জাহিদুল ইসলাম (৪০) ব্রজেন মন্ডল (৩০) ও আনসার ব্যাটালিয়নের হাবিলদার কামাল পাশা (৩৮)। তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভ্যন্তরিন চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে অবস্থা গুরুত্বর হওয়াতে মিন্টু বৈরাগী ও আনসার সদস্য কামাল পাশাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অস্ত্রধারীদের হামলায় আহত ব্রজেন মন্ডল বলেন, রাতে হঠাৎ করে ৫০-৬০ জনের একটি অস্ত্রধারী দল কাটাতারের বেড়া কেটে মেটেরিয়াল ইয়ার্ডের ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। আমরা বাঁধা দিলে নিরাপত্তাকর্মীদের উপর দল বেঁধে হামলা করে তারা। এ সময় তাদের আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে কাছে থাকা মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। ডাকচিৎকার শুনে আনসার সদস্য এগিয়ে আসলে অস্ত্রধারীরা আনসার সদস্যদের উপরও হামলা করে। এক পর্যায়ে আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
আহতদের প্রত্যেকের শরীরের এলোপাতারি মারধরে জখম রয়েছে জানিয়ে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা রুহুল আমিন সজিব বলেন, রাত ১টার দিকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়। এদের মধ্যেদুজনের মাথা গভীর ক্ষত থাকাতে খুলনায় রেফার্ড করা হয়েছে। অন্যদের এখানে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আনসার সদস্যদের দাবি, নিরাপত্তাকর্মীদের হামলা করলে আসার হাবিলদার মোঃ কামাল পাশা ও সিপাহি মোঃ জাহিদুল ইসলাম অস্ত্রধারীদের দাওয়া করে। অস্ত্রধারীরাও উল্টো আনসার সদস্যদের উপর হামলা করে। এক পর্যায়ে কামাল পাশার মাথায় আঘাত করে। তখন আত্ম রক্ষাতে কামাল পাশা অস্ত্রধারীদের উপর গুলি ছোড়ে। ৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ার পরে অস্ত্র ধারীরা পালিয়ে যায়। কামাল পাশার গুলিতে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য আশাবুল গাজী (২০) গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন খুলনার ৩ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক মোল্যা আবু সাইদ।
তিনি বলেন, আহত আনসার সদস্যদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে তল্লাশী চালিয়ে এসএমজি পিস্তলের ২৬ টি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এদিকে নিরাপত্তাকর্মীদের উপর হামলা ও ডাকাতির চেষ্টায় এখন পর্যন্ত মামলা না হলেও, এই ঘটনার সাথে জড়িত ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। কৌশলগত কারণে নাম ঠিকানা জানায়নি পুলিশ।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান বলেন, ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এটি কোন ডাকাতির ঘটনা নয়। চক্রের সদস্যরা মূলত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল চুরি করতে এসেছিল। ঘটনার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত আসামিদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ মামলা দিলে মামলা দায়ের করা হবে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নিরাপত্তা ও প্রশাসন মোঃ অলিউল্লাহ বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাঝে মাঝে চুরি হয়। কিন্তু কখনও এক সাথে এত বেশি দূশ্কৃতকারীরা আসেনি। এখানে শুধু মালামাল চুরি বা লুট নয়, অন্য কোন বিষয় আছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মানব সম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মঙ্গলা হরিন্দ্রান বলেন, অস্ত্রধারীদের হামলায় আমাদের ৫জন নিরাপত্তকর্মী আহত হয়েছে। তারা সবাই শঙ্কামুক্ত, তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ম্যাটারিয়াল ইয়ার্ডটি মূলত মূল কেন্দ্রের বাইরে। কাটাতার দিয়ে ঘেরা এই ইয়ার্ডে লোহার রড, তামার তার, তামার তারের বাক্স, লোহার এ্যাঙ্গেল, স্টিলের পাত, লোহার পাতসহ ব্যবহার যোগ্য ও ব্যবহার অযোগ্য বিভিন্ন মূল্যবান ধাতু রাখা হয়। মূলত এসব ধাতু লুট করতেই সংঘবদ্ধ চক্রটি ম্যাটারিয়াল ইয়ার্ডে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই এই কেন্দ্রে ছোট ছোট চুরির ঘটনা ঘটে আসছে।