পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে সামনে রেখে ঢাকা-বরিশাল রুটে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি প্রায় শেষপর্যায়ে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কম সময়ে যাতায়াত করতে পারায় সড়কপথে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর এক সময়ের ভরসাস্থল নদীপথের বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে অনেকটা ঢিমেতালে। পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চের আগাম টিকিটের তেমন চাহিদা নেই। তবে রোটেশনের কারণে ট্রিপে লঞ্চ কম থাকায় ছুটির দিনগুলোর আগে যাত্রীচাপ থাকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে। তখন কালোবাজার ছাড়া টিকিট পাওয়া দায়। এ অবস্থায় কালোবাজারি রোধসহ সড়ক ও নৌপথে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন, জেলা, হাইওয়ে ও নৌ পুলিশ।
অপরদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে সরকার যখন বাস ভাড়া কমানোর চেষ্টা করছে। ঠিক সেই সময়ে নতুন ভাড়া কার্যকর করার পরিবর্তে ঈদ-উল ফিতরের যাতায়াতে বাস, লঞ্চ, উড়োজাহাজসহ বিভিন্ন গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে নৈরাজ্য শুরু হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব নৈরাজ্য বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে গত ১৫ রমজান থেকে আগাম টিকিট বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের বিলাস বহুল লঞ্চের মালিকরা। এ ঘোষণার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কাঙ্খিত যাত্রীদের দেখা নেই লঞ্চের টিকিট কাউন্টারগুলোতে। অথচ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পাওয়া যেতো না লঞ্চের টিকিট।
লঞ্চর স্টাফরা জানিয়েছেন, আগামী ৬ এপ্রিল থেকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ৩৮টি নিয়মিতসহ ঈদের বিশেষ লঞ্চ চলাচল করবে। তবে এখনো আশানুরূপ টিকিট বিক্রি হয়নি। সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টার স্টাফ শাকিল হোসেন জানান, গতবছরও লঞ্চ কাউন্টারগুলোতে যে রকম চাপ ছিল, এবার তেমনটা নেই। এবার টিকিট বিক্রিও অনেকটা কম হচ্ছে।
তবে ভিন্ন চিত্র সড়কপথে। ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা থেকে বরিশাল আসার অগ্রিম টিকিট বিক্রি ইতোমধ্যে শেষ করেছে পরিবহনগুলো। এমনকি ফিরতি টিকিটও প্রায় শেষের পথে। যাত্রীচাপ সামলাতে সবধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কম সময়ে আসা-যাওয়ার সুবিধায় সড়কে যাত্রীচাপ বেড়েছে কয়েকগুণ দাবি করে দূরপাল্লার পরিবহনের ম্যানেজার বাদশা মিয়া জানান, ঈদের লম্বা ছুটির কারণে এবারে যাত্রীর চাপ বেশি। এ অবস্থায় নিজ নিজ উদ্যোগে কোম্পানিগুলো চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
অপরদিকে বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য কোস্টগার্ড, থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ’র সদস্যরা একসাথে কাজ করবেন। বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নৌপথের পাশাপাশি সড়কেও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ দাবি করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির জানান, নগরীর নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাস টার্মিনাল এবং নদীবন্দরে তিনটি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে ঈদে নারীর টানে বাড়ি ফেরা মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ করে আবার কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদের ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। আছে শবে কদর, পয়লা বৈশাখের ছুটি। দীর্ঘ ছুটি থাকায় এবার ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেশি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের দাবি ॥ জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে সরকার যখন বাস ভাড়া কমানোর চেষ্টা করছে। ঠিক সেই সময়ে নতুন ভাড়া কার্যকর করার পরিবর্তে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের যাতায়াতে বাস, লঞ্চ, উড়োজাহাজসহ বিভিন্ন গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দরা। তাই তারা এসব নৈরাজ্য বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর পাঠানো এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার প্রতিবছর ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যকারী গণপরিবহনগুলোকে কাগুজে বাঘের মতো হুঁশিয়ারি দেয়। কার্যকরভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এবারের ঈদের অনলাইন টিকিটে বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহন কোম্পানিগুলো প্রকাশ্য অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অতীতের মতো এখনও কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অভ্যন্তরীণ রুটের আকাশ পথে দিগুন-তিনগুন দামে বিমানের টিকিটি বিক্রি হচ্ছে। সড়কপথে বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটে ঈদের আগাম টিকিটের নামে দুই থেকে তিনগুন বাড়তি দামে বাসের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। নৌ-পথে বিভিন্ন রুটে কেবিনে ক্ষেত্রে দিগুন বাড়তি ভাড়ায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এমন ভাড়া নৈরাজ্য প্রকাশ্য ঘটলেও সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের লোকজন ও গার্মেন্টস কর্মী, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা ঈদের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে চরম বিপাকে পরেছেন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে সংশ্লিষ্ট বাস কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা। একইভাবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন পুলিশের আইজিপি। বিআরটিএ, বিআইডব্লিউটিএ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশের পক্ষ থেকেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এমন ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে কেউ এগিয়ে আসেনি বলেও মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী উল্লেখ করেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ বলছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ঈদ যাত্রায় নিম্ন আয়ের লোকজনের বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, পণ্যবাহী পরিবহনে, ফিটনেস বিহিন বাসে, খোলা ট্রাকে, মোটরসাইকেলে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত কোনভাবেই বন্ধ করা যাবেনা। তাই যাত্রী স্বার্থ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দরা।