ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার 'সরকার অটো রাইস মিল' মালিকের ছেলের নির্যাতনের আট দিন পর মারা গেল চাতাল শ্রমিক সামিউল ইসলাম (২৬)। গতকাল শনিবার ভোরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সামিউল ইসলাম। এ ঘটনায় মিলের ম্যানাজার এনামুল হক (২২)-কে গতকাল সকাল ৯ টার দিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ২৯ মার্চ রাতে রাইস মিলে কাজ করতে গিয়ে ঈদের বেতন-বোনাসের দাবিতে মালিক পক্ষের সঙ্গে তর্কবির্তকে জড়িয়ে পড়া সামিউলকে গুদামঘরে হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করেন সরকার অটোরাইচ মিলের মালিকের ছেলে ও তার লোকজন। শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার বনকালী গ্রামের মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলে সামিউল ইসলাম। গত প্রায় এক যুগ আগে বিয়ে করেন ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাকতা আকন্দপাড়া গ্রামের মমিন মন্ডলের মেয়ে সাথী আক্তারকে। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস করে। তাদের ঘরে রয়েছে সোহান (৬) ও আব্দুল্লাহ (৪) নামের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। শ্বশুরবাড়িতে থেকে বাকতা মাজুমতলী গ্রামের 'সরকার অটো রাইস মিলে' চাতাল শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। একই মিলে তার শাশুড়ি মালেকা বেগম শ্রমিকদের রান্নাবান্নার কাজ করেন। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাতে রাইস মিলে কাজ করতে ঈদের বেতন- বোনাসের দাবিতে মালিক পক্ষের সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সামিউল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সরকার অটো রাইস মিলের মালিক আবুল কালাম সরকারের ছেলে শরিফ মিয়া সাত থেকে আট জন কর্মচারী নিয়ে সামিউলকে মিলের গুদামঘরে নিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে রাতভর শারীরিক নির্যাতন করেন। লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে পা ও কোমর ভেঙে ফেলে। রড গরম করে দুই পায়ে ছ্যাঁক দেয়। গরম চাউলের বস্তা বুকের ওপর রেখে চাপ দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। নির্যাতনে একপর্যায়ে সামিউলের অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে সকালে মিল মালিকের ছেলে শরীফ মিয়া নির্যাতনের শিকার জামাইয়ের শাশুড়িকে জানায়, তার মেয়ের জামাইকে রাইস মিল থেকে নিয়ে যাবার জন্য। শাশুড়ি ও দুই সন্তান নিয়ে স্ত্রী সাথী আক্তার অটো রাইস মিলে গেলে তাদের উপস্থিতিতেও লোহার রড দিয়ে সামিউলকে পেটাতে থাকে। স্ত্রী-সন্তানদের আকুতিতে সকালে তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। সামিউল শারীরিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় ঐ দিন শনিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শারীরিক নির্যাতনের আঘাত এতটাই ভয়ংকর ছিল, ভর্তির পর তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হলেও হতদরিদ্র সামিউলের পরিবার টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে পারেনি। এ ঘটনায় সামিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার বাদী হয়ে বুধবার (৩এপ্রিল) ফুলবাড়ীয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় শরীফ মিয়া, এনামুল হকসহ চার এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত কয়জনকে আসামি করা হয়।