ফুলের চাহিদা কম বেশি থাকে সব সময়। তবে বাংলা নববর্ষ ফুলের চাহিদা কয়েক গুন বেড়ে যায়। আর নববর্ষকে সামনে রেখে কালীগঞ্জের ফুল চাষিরা ব্যাস্ত সময় পার করছেন ফুলের যত্ন নিতে। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফুলের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা লিলিয়াম, জারবেরা, গ্লাডিাডিওয়ালস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, চন্দ্র মল্লিকা, ভূট্টাফুল, গাঁদাসহ নান জাতের ফুলের আবাদ করেছে বিশেষ করে গান্না, বালিয়াডাঙ্গা, সিমলা, রোকনপুর, রাখালগাছি, বিনোদপুর, মনোহরপুর, রাখালগাছিসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ফুলের আবাদ হয় সারা বছর। উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য গান্না ও বালিয়াডাঙ্গায় আলাদা ভাবে প্রতিদিন ফুলের বাজার বসে থাকে।ত্রিলোচনপুর গ্রামের ফুলচাষি টিপু সুলতান জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ফুল চাষ করছেন। তার উৎপাদিত জারবেরা ফুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠান। বাংলা শুভ নববর্ষ, এ দিনে একটি ফুল অগণিত তরুন-তরুণী, যুবক-যুবতীসহ সকল বয়সের মানুষের হাতে তুলে দিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে কালীগঞ্জের ফুল কন্যারা। প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষে দিন ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। আর এই চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে কালীগঞ্জ এলাকার ফুল চাষীরা। এলাকায় মাঠের পর মাঠ চাষ করা হয়েছে গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল ক্ষেত। এসব ফুল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ ও মালা গাথা থেকে শুরু করে বিক্রি করা পর্যন্ত এলাকার অধিকাংশ মেয়েরা ফুলের কাজে ব্যাস্ত থাকে। ফলে পুরুষদের পাশাপাশি মেয়েদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ এলাকার উৎপাদিত ফুল প্রতিদিন দূরপাল্লার পরিবহনে চলে যাচ্ছে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহর গুলোতে। জাতীয় ও বিশেষ দিন গুলো ছাড়াও সারাবছর এ অঞ্চলের উৎপাদিত ফুল সারাদেশের চাহিদা মেটাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলনগরী বলে খ্যাত বালিয়াডাঙ্গার ফুলকন্যারা বছরের বারো মাসই ফুল তোলাও মালা গাথার কাজ করে থাকে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিন সামনে রেখে কাজ একটু বেশি করতে হয় তাদের। যে কারনে তাদের আয় উপার্জন অনেকটা বেশি হয়। এখন বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতিদিন সকাল বিকাল কাজ করতে হচ্ছে। ব্যবসায়িরা ফুল নিতে ফুল ক্ষেত মালিকদের বাড়ি বসে থাকছে। ফলে সব কিছু রেখে সারাদিন মাঠের ফুল ক্ষেতের ফুল তুলছে।
কালীগঞ্জ কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, এ বছর ৭৫ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করা হয়েছে। বিগত বছরের ন্যায় এবছর বেশি আবাদ হয়েছে। গতবছর ছিল ৭২ হেক্টর জমিতে।উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ক্রমান্বয়ে ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফুলের আবাদ হয় কালীগঞ্জ উপজেলায়, আবার কালীগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় বালিয়াডাঙ্গা এলাকায়। এ কারনে বালিয়াডাঙ্গা এলাকাকে বলা হয় ফুলনগরী। এ কারণে সবাই এখন এই এলাকাকে ফুলনগরী বলেই চেনে। সামনে কয়েকদিন পর পহেলা বৈশাখ ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ীরা সারা বছরই ব্যাস্ত সময় পার করেন। তাদের যেন কোন ফুরসত নেই। বর্তমানে এলাকার ফুল চাষিরা নিজের বাগান পরিচর্চা ও বাজার নিয়ে নানা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। উপজেলায় কৃষকরা এখন বানিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ করেন। অনেকে ফসলি চাষ বন্ধ করে ফুল চাষ করে থাকেন। মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে অনিন্দ্য শোভা আর ফুলের স্নিগ্ধ সুবাস। চাষিরা বলছেন ফুল এখন শুধু জাতীয় দিবসেই নয় সারা বছরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছর সামনে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কত টাকার ফুল বিক্রির সম্ভ¦না রয়েছে তা এখন কেউ বলতে পারছে না। তবে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার বলছেন বাংলা নববর্ষে প্রায় ৬০ কোট টাকার ফুল বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা বলছেন এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করতে তাদের সাকুল্যে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বছর শেষে তাদের লাভ হয় বিঘা প্রতি জমিতে ২০ লাখ টাকা। ওই এক বিঘা জমিতে জারবেরা ফুল চাষ করতে ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে বছর শেষে লাভ হয়, ২৫ লাখ টাকা। ফুলের মান ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে।
এলাকার ফুল চাষিরা ধারনা করছে গতবারের তুলনায় এবার বাংলা নবর্ষে ফুলের দাম দ্বিগুন হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুল বিক্রি পরিমাণে বেশি হবে বলে তারা আশা করছেন। সবাই চায়না রেড গোলাপ বেশি পছন্দ করে। এছাড়াও দেশি লাল ও সাদা গোলাপের চাহিদাও আছে। কেউ কেউ আবার অন্যান্য ফুল যেমন, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গেলোডিলাক্স দিয়ে তোড়াও তৈরি করে নেয়।
এ ব্যাপারে কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি, তিনি বলেন এলাকায় ফুলের আবাদ অনেক ভাল হয়েছে। ফুল চাষিরা বাংলা নববর্ষে প্রায় ৬০ কোট টাকার ফুল বিক্রি করবে এমন টা ধারনা করছেন।