পরিবারের সকলের সাথে হাসি-আনন্দে পবিত্র ঈদ উল ফিতর উদযাপন করা হলোনা অবুঝ শিশু মরিয়ম (৪) এর। খাবারের বিষক্রিয়ায় (ফরমালিন যুক্ত খাবার) মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তে হলো শিশুটিকে। এ ঘটনায় ঈদ আনন্দ উড়ে গেলো শোকাচ্ছন্ন মোঃ খায়রুল শেখ ও তাজমিন খানম দম্পত্তির পরিবার থেকে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামের মোঃ খায়রুল শেখ ও তাজমিন খানম দম্পত্তির দুটি মেয়ে সন্তান। বড় মেয়ে খাদিজা (১১) ও ছোট মেয়ে মরিয়ম (৪)। স্বামী-স্ত্রী চাকুরী করেন ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে। বসবাস করেন ঢাকার কামরাঙ্গিরচর এলাকার ৯নং গলিতে।
গত সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাসার সামনের কাঁচামাল ব্যবসায়ীর (ভ্যানে সবজি বিক্রেতা) কাছ থেকে এক কেজি টমেটো কিনে বাসায় যান মোঃ খায়রুল শেখ। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টমেটোর সালাত দিয়ে ভাত খান মোঃ খায়রুল শেখ ও তার দুই মেয়ে। রাত ৯টার দিকে ছোট মেয়ে মরিয়ম প্রথম বমি করে। রাত সাড়ে ৯টায় দ্বিতীয়বার বমি করে প্রচন্ড দূর্বল হয়ে পড়ে মরিয়ম। এরপর মরিয়ম ঘুমিয়ে পড়ে। বাসার নিচে থাকা ফার্মেসী থেকে গ্যাসের ওষুধ নিয়ে যান তিনি। এরপর রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বড় মেয়ে খাদিজাসহ বাবা মোঃ খায়রুল শেখ বমি করেন। এ সময় ছোট মেয়ে ঘুম থেকে জেগে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে ‘‘বাবা আমার পেট ব্যাথা করছে’’। মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়ে মরিয়ম। স্ত্রীকে নিয়ে মোঃ খায়রুল শেখ সিএনজিতে করে দ্রুত ল্যাব এইড হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। দূরত্ব বেশি হওয়ায় হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরী হয়ে যায় অনেক। ততক্ষণে সিএনজিতে মৃত্যর কোলে ঢোলে পড়ে মরিয়ম। মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতে পারলেও মোঃ খায়রুল শেখ স্ত্রীসহ বড় মেয়েকে বুঝতে দেয়নি। ল্যাব এইড হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের জানায় অনেক আগেই মরিয়মের মৃত্যু হয়েছে। টমেটো না খাওয়ায় শুধুমাত্র স্ত্রী তাজমিন খানম সুস্থ্য ছিলেন। ল্যাব এইড হাসপাতালে বড় মেয়ে ও স্বামীর চিকিৎসা করিয়ে বুধবার (১০ এপ্রিল) গ্রামের বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামে পৌঁছান মরিয়মের লাশ নিয়ে। সকাল ১০টার দিকে মরিয়মের দাফন সম্পন্ন হয়।
মৃত মরিয়মের পিতা মোঃ খায়রুল শেখ বলেন, ওই টমেটো ফরমালিনযুক্ত ছিলো। টমেটো খেয়ে আমরা তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়ি। মৃত মরিয়মের আত্মীয়রা জানায়, ঈদের পর আইনগত ব্যবস্থা নেবো। ছোট মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় পরিবারের ঈদ আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। এলাকার মানুষ এ ঘটনায় শোকাহত। পরিবারটিকে স্বান্তনা দেবার ভাষা কারো কাছে নেই।