ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রশাসনের নিষেধ অমান্য করে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরকারী জায়গার ধান কেটে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। যদিও এই অভিযোগকে অস্বীকার করে গভীর ষড়যন্ত্র বলছেন অভিযুক্তরা। উপজেলার শাহজাদাপুর গ্রামের তিতাস নদীর পাড়ে আজ (শুক্রবার) ভোরে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কেটে নেয়া ধান উদ্ধার করে জব্দ করেছেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সেখানে রিপন নামের ব্যক্তি মালিকানা জায়গা সংলগ্ন স্থানে সরকারী জায়গা রয়েছে। ওই সরকারী জায়গা চাষাবাদকৃত ধান নিয়ে রিপন গংদের সাথে কাউছার মাসুক আফজালদের বিরোধ হয়। গত কিছুদিন পূর্বে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ইউপি চেয়ারম্যানসহ উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন অফিসার ইনচার্জ। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরেও সভা হয়। উভয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় সরকারী ওই জমির ধান দুই পক্ষের কেউ কাটবেন না। জমির ধান চেয়ারম্যানের তত্ববধানে কাটা হবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে সম্মত হয়ে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করে গেছেন। রিপন জানায় এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে আজ ভোরে ইউপি সদস্য জুয়েল, নাজমা বেগম, আ.লীগ নেতা শেখ মুন্না, আজিজ ও ময়েজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই জমির ধান কেটে নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লুকিয়ে রাখা ধান উদ্ধার করে জব্দ করেছেন। এর আগে তারা ওই সরকারী জায়গা থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাটি বিক্রি করেছে। ইউএনও স্যার এসে বাঁধা দিয়েছেন। মহিলা ইউপি সদস্য (১,২ ও ৩) নাজমা বেগম বলেন, আমি নিরপেক্ষ। থানায় সিদ্ধান্ত ছিল চেয়ারম্যান ধান কেটে আনবেন। শুনেছি আজকে কাউছাররা ধান কেটে আনছে। আমি কিছুই জানি না ঘুমিয়ে ছিলাম। ইউপি সদস্য জুয়েল বলেন, আমার বিরূদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট। যার জমি সে কেটে আনছে। কাউছাররা আমাদের বংশের লোক। চেয়ারম্যান প্রশাসনের দেয়া সিদ্ধান্ত কাউছারদের জানায়নি। শাহাজাদাপুর ইউপি আ.লীগ নেতা শেখ মো. মুন্নার বিরূদ্ধে আনীত অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমি বিজয়নগরে বেড়াতে এসেছি। তবে শুনেছি যাদের জমি তারাই ধান কেটেছে। জায়গা সরকারের তবে তারা গত ৫০ বছর ধরে চাষ করছে। সারা দেশেই তো এই ভাবে সরকারী জায়গায় চাষাবাদ করে থাকে। ইউপি চেয়ারম্যান আছমা আক্তার বলেন, সরকারী জায়গা নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্ধ থাকায় থানায় ও ইউএনও স্যারের দপ্তরের সভার সিদ্ধান্ত ছিল কেউ সেখানে যাবে না। সময় হলে আমি ধান কেটে উনাদেরকে জানাব। কিন্তু হঠাৎ করে তারা কেন ধান কেটে ফেলল বুঝলাম না। পুলিশ এসে ওই কাটা ধান উদ্ধার করেছেন। আমরা বিশৃঙ্খলা নয় শান্তি চাই। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, জায়গাটি খাস। পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিরোধ থাকায় থানায় বসে তাদের স্বাক্ষর রেখে চেয়ারম্যানকে ধান কাটার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। অন্য কাউকে নয়। ইউএনও স্যারও বিষয়টি জানেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমার দপ্তরে সভা করে বিরোধ বা দাঙ্গা নিস্পত্তির স্বার্থে সিদ্ধান্ত ছিল সময় হলে চেয়ারম্যান ওই জমির ধান কাটবেন। উভয় পক্ষের কেউ এই মূহুর্তে জমিতে যাবেন না। শুনলাম আজকে ভোরে একদল লোক ধান কেটে নিয়েছে। আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই। ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে। আমি তদন্ত সাপেক্ষে উস্কানি ও মদদ দাতাদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব।