ঈদুর ফিৎ্রের টানা ছয় দিনের ছুটিতে রক্তে রঞ্জিত ছিল রাজশাহীর সড়ক-জনপদ। এ সময়ের মধ্যে ঈদ আনন্দ উদ্্যাপন করতে গিয়ে ফাঁকা সড়কে বেপরোয়া যানচলাচলে দুর্ঘটনায় এক সেনা সদস্য ছাড়াও তিন কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঈদের দিন ছাড়াও ২য় ও ঈদের ৪র্থ দিনে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই বয়সে ছিল তরুণ। যাদের মধ্যে দুজন বন্ধুও আছে।
নিহতরা হলেন-রাজশাহীর পবা উপজেলার কয়রা গ্রামের সাধু মিয়ার ছেলে শান্ত হোসেন (২০) ও আক্কাস আলীর ছেলে ফাহিম ইসলাম (২০)। অপর আরেকজনের নাম আজিজুল ইসলাম (১৮)। তিনি পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর থানার ভড়ুয়া গ্রামের আকানির ছেলে। এর মধ্যে শান্ত ও ফাহিম ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল), আজিজুল শুক্রবার (১২ এপ্রিল) এবং রোববার (১৪ এপ্রিল) রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সুলতানপুর-বিলমাড়িয়া সড়কের মহারাজপুর নামকস্থানে পাওয়ার ট্রলির ধাক্কায় জঘম ও রক্তাক্ত হয়ে নিহত হয়েছেন সেনা সদস্য আশরাফুল ইসলাম বিপুল। তিনি বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের সুলতান গ্রামের আক্কাছ মিয়ার ছেলে।
পৃথক এসব ঘটনার মধ্যে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মোবারক পারভেজ জানান, ঈদের দিন দুপুরে দুই বন্ধুসহ আরও কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছিল। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে নগরীর বুধপাড়া ফ্লাইওভারের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাযকের কাছে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে গুরুত্বর আহত হয় কিশোর শান্ত এবং ফাহিম ইসলাম। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলেই তাদের মৃত্যু হয়।
আর নগরীর কাশিয়াডাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরান হোসেন জানান, ঈদের ছুটির দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে মিনি পিকআপভ্যানে করে সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে নাচতে নাচতে যাওয়ার সময় মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় বাসের ধাক্কায় আজিজুল ইসলাম নামের এক কিশোর নিহত হয়। সে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভরুয়াপাড়া এলাকার আকানি ইসলামের ছেলে।
এদিকে, বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাঘা উপজেলার সুলতানপুর-বিলমাড়িয়া সড়কের মহারাজপুর নামকস্থানে বেপোরোয়া গতির একটি পাওয়ার ট্রলির ধাক্কায় রাস্তায় ছিঁটকে পড়ে রক্তাক্ত হয়ে গুরুতর আহত হয় সেনা সদস্য আশরাফুল ইসলাম। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
অন্যদিকে, রোববার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বধ্যভূমি এলাকার হরিজনপল্লি সংলগ্ন মেহগনি গাছের বাগান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বাদাম বিক্রেতা ফারুক হোসেন (৪৮) মরাদেহ। তিনি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছি উত্তর ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিল। সে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় বাদাম বিক্রি করতেন। তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) টিম কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসন।
এছাড়াও নিখোঁজের চার দিন পর শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর ইউনিয়নের থান্দারপাড়া গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে বেদেনা বেওয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বৃদ্ধার গলায় কাটা চিহ্ন এবং শরীরে বিভিন্ন স্থান জখম ছিল। এ ছাড়া মুখে স্কচটেপ জড়ানো ছিল। নিহত বৃদ্ধা ছিল থান্দারপাড়া গ্রামের মৃত মোজাহার আলীর স্ত্রী। এ ঘটনার রহস্য অনুসন্ধানে পিবিআই ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) যৌথ টিম ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। পুলিশ জানায়, জাতীয় জরুরি সেবাতে ‘৯৯৯’ একজন স্থানীয় ফোন দিয়ে কবরস্থানে পড়ে থাকা বস্তা থেকে দুর্গন্ধের বিষয়টি জানিয়েছিল।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান জানান, চার দিন ধরে ওই বৃদ্ধা নিখোঁজ ছিলেন। পরে শুক্রবার বিকেলে তার বাড়ির পাশেরই একটি কবরস্থান থেকে বস্তবন্দি অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ খুনের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে উল্লেখ করে ওসি বলেন, শিগগিরই এই হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা হবে।