জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম বেপারী ও তার ভাড়াটিয়া লোকজনদের মঙ্গলবার দুপুরে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন ভূক্তভোগী এলাকাবাসী। এরপূর্বে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
সরেজমিনে ইউপি সদস্য মোঃ মুসা আলী, আবদুস সালামসহ নয়জন ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম বেপারী সরকার থেকে বরাদ্দ ত্রাণের টিন, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, গ্রামীণ অবকাঠামোর চাল, গম ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও দুঃস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিডি চাল, ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কারের ১০ লাখ টাকার কোন কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কার্ডধারী ৫১২ জেলের জন্য ৪০ কেজি করে বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রি করেছেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম বেপারী তার (স্বপন) প্রভাব বিস্তার করে একের পর এক অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউপি চেয়ারম্যান অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। চেক জালিয়াতির মামলায় ইতোমধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এক বছর কারাদ- ও ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৩৮৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভিজিডি ও জেলেদের চাল পাচারের সময় পাঁচ হাজার ১৫২ বস্তা চাল উদ্ধারের ঘটনায় র্যাবের দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলারও আসামি চেয়ারম্যান নুরে আলম। এ ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে খাসজমির দলিল করে দখলের অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের প্রমানসহ তার (ইউপি চেয়ারম্যান) বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে নয়জন ইউপি সদস্য ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১০টি দপ্তর প্রধানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, আবেদনের ভিত্তিত্বে উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা পল্লী দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে তদন্তে আসেন। এ সময় চেয়ারম্যান ও তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে পরিষদে প্রবেশ করে আবেদনকারী ইউপি সদস্যদের দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করেন। এনিয়ে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে চেয়ারম্যানের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা মেম্বারদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তখন উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে একদল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে দেখা গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর পরই ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম ও তার সহযোগিরা মোটরসাইকেলযোগে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স এলাকা ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এ সময় সরকারের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শত শত ভূক্তভোগীরা চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিদের অবরুদ্ধ করে নানা শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিরা উপস্থিত জনতার ওপর চড়াও হলে বিক্ষুব্ধরা তাদের ধাওয়া করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় থানা পুলিশ বিক্ষুব্ধদের ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে চেয়ারম্যানকে রক্ষা করেন।
তবে ইউপি সদস্যদের আনীত সকল অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে অভিযুক্ত কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরে আলম বেপারী বলেন, আমার প্রতিপক্ষের লোকজনে ইউপি সদস্যদের পুঁজি করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।