মেহেরপুরে মানব পাঁচার করার অপরাধে মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হকেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষনার সময় দন্ডিত আসামি অনুপস্থিত ছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ মানব পাঁচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো: মোঃ তহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
জানা যায়, মামলাটি মানব পাঁচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৬, ৭ ও ৮ ধারায় দায়ের করা হয়েছে। মেহেরপুর পৌরসভার নতুনপাড়া ৭ নং ওয়ার্ডের জতনের মেয়ে রেবা খাতুনকে (১৯) জর্ডানে পাঁচার করার অভিযোগে তার ভাবী (ভাইয়ের স্ত্রী) মোছাঃ গাজু খাতুন আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হকের বিরুদ্ধে গত ২৭/১০/২০১৪ খ্রিঃ তারিখে এই ট্রাইব্যুনালে নালিশী দরখাস্ত দাখিল করেন। নালিশী দরখাস্তটি শুনানীর পর মেহেরপুর সদর থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার আদেশ প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের মামলা সংক্ষেপে এরূপ যে, ভিকটিম রেবা খাতুন ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন। এই সুযোগে আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হকের সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয়। আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হক ভিকটিমকে ৫০,০০০/- টাকায় জর্ডানে ভাল চাকুরীতে প্রেরণের প্রস্তাব দেন। মামলা দায়েরের অনুমান ০১ মাস পূর্বে আসামি ও ভিকটিম ঢাকা থেকে এজাহারকারীর বাড়ীতে আসেন এবং এজাহাকারী ভিকটিমকে জর্ডানে প্রেরণের জন্য আসামীকে ৫০,০০০/- টাকা প্রদান করেন। আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হক গত ১০/১০/২০১৪ খ্রিঃ তারিখে ভিকটিম রেবা খাতুনকে জর্ডানে পাঠানোর উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে যান। ওই তারিখের ০৪ দিন পর রেবা খাতুনকে ফোনে না পেয়ে এজাহারকারী আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হকের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হক ভিকটিম রেবা খাতুনকে বিদেশে পাঠিয়ে দিবেন বা দিয়েছেন মর্মে এজাহারকারীকে ঘোরাতে থাকেন। পরবর্তীতে গত ২০/১০/২০১৪ খ্রিঃ তারিখ আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হক এজাহারকারীর বাড়ীতে আসেন এবং সাক্ষীদের সামনে অনুমান সকাল ১০.০০ টার সময় এজাহারকারী ৫০,০০০/- টাকা সহ ভিকটিম রেবা খাতুনকে ফেরত দেওয়ার জন্য আসামীকে অনুরোধ করেন। আসামি ঐ সময় ওই টাকা বা ভিকটিমকে ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিম রেবা খাতুনকে পাঁচারের অভিযোগে এজাহারকারী মোছাঃ গাজু খাতুন আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হকের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। মামলাটি মেহেরপুর সদর থানার এসআই মোঃ দুলু মিয়া ও এসআই মোঃ ফারুক হোসেন তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হকের বিরুদ্ধে মানব পাঁচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৬, ৭ ও ৮ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
আদেশে জানা যায়, আসামি মোঃ জাহিদুল মেম্বার ওরফে জাহিদুল হকের বিরুদ্ধে মানব পাঁচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৬(২) ধারায় গঠিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ওই ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হলো এবং ওই ধারায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ) টাকা অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও ০২ (দুই) বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।