প্রতীক বরাদ্ধের পর জমে ওঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। বসে নেই কোন প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। তীব্র তাপদাহও হার মানছে প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাঁপের কাছে। চেয়ারম্যান পদে শুরূতে আওয়ামী লীগের ৮ নেতা থাকলেও বর্তমানে লড়াই করছেন ৪ নেতা। কর্মী সমর্থক ও এই ৪ নেতার ভাবখানা এইরকম যে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবেন না। জয় লাভের বিষয়ে চার প্রার্থীর প্রত্যেকেই আত্ম প্রত্যয়ী। পাশের বিকল্প ভাবতে নারাজ তাদের সমর্থকরা। তবে কাগজে কলমে থাকলেও প্রতীক বরাদ্ধ পাওয়ার পর ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শাহবাজপুর ইউপি যুবলীগের সাবেক সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাজ্জি। পছন্দের নেতার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চা-এর দোকান ও আড্ডায় বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন সমর্থকরা। পিছিয়ে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল মিয়াও। জামালের সমর্থকদের সাফ কথা, নীরব ভোটে বিজয়ী হবো আমরাই। চেয়ারম্যান ৫ প্রার্থীর লড়াইটা দারূন ভাবে উপভোগ করছেন সাধারণ ভোটাররা। অনুসন্ধানে দলীয় ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত সরাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। সাধারণ ভোটার ও নির্ভর যোগ্য সূত্র গুলোর মতে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৪ নেতাই হেভিওয়েট প্রার্থী। কারণ বিএনপি বা জাপার কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় নেই। প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সরাইল সদরের কুট্রাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মহিউদ্দিন ঠাকুরের ছেলে রফিক উদ্দিন ঠাকুর (ঘোড়া)। তিনি ২০০০ ও ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে কাউন্সিলের মাধ্যমে মনোনিত উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক। আবার ২০০৯ ও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কারণে ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত তার রয়েছে অগণিত নেতা কর্মী ও ভক্তবৃন্দ। আস্থা ও ভরসার ওই স্থান গুলোই রফিক ঠাকুরকে বিজয়ের সিগনাল দিচ্ছেন। রফিক ঠাকুর বলেন, তিন যুগেরও অধিক সময় ধরে উপজেলা আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের নেতা কর্মীর সেবা করে যাচ্ছি। উপজেলা সদর সহ ৯টি ইউনিয়নের আনাচে কানাচে রাস্তা ঘাট ব্রীজ কালভার্ট ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণ করেছি। জনগণ আমাদের সাথে ছিল এবং আছে। এক সময়ের সরাইল কলেজ ও উপজেলা শাখা ছাত্রলীগ নেতা পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শের আলম মিয়া। গত ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন উপজেলা আ.লীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্যও। রাজনীতি আর জনপ্রতিনিধিত্বের কারণে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নেই তার পরিচিতি বেড়েছে। এই সুযোগ ও জনগণের ভালবাসাকে কাজে লাগিয়ে এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভের বিষয়ে খুবই আশাবাদী এই আওয়ামী লীগ নেতা। শের আলম (মোটর-সাইকেল) বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে পাঁচ বছর উপজেলার সকল মানুষের জন্য কাজ করেছি। এরপরও এখন পর্যন্ত আমি জনগণের সেবক হয়ে কাজ করছি। কাজ করে যাব আজীবন। ইনশাল্লাহ ৮ মে তারিখের নির্বাচনে আমি বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করব। শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইদ্রিস মিয়ার সন্তান মো. আবু হানিফ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। ছোট বেলা থেকেই পিতার দীক্ষায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির পতাকা তলে দূঢ় অবস্থান তার। পরবর্তীতে সরাইল উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের (প্রস্তাবিত কমিটির) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে হানিফ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবু হানিফ (কাপ-পিরিচ) তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে দিনরাত ছুঁটে চলছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তৃণমূলের আশ্বাসে বিশ্বাস রেখেই সামনের দিকে এগিয়ে চলছেন হানিফ। বিজয়ের শেষ হাঁসিটা তিনিই হাঁসবেন এমন প্রত্যাশা রয়েছে তাঁর। হানিফ বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগেই মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। কারণ দেশমাতৃকার জন্য জীবন বাজি রাখা পিতার সন্তান আমি। গত পাঁচ বছর সততার সাথে জনগণের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। উল্লখযোগ্য সংখ্যক গ্রামীণ সড়ক সলিং ও পাকা করেছি। জনগণের ভালবাসা ও ভোটে আমি এবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হব। পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূঁইশ্বর গ্রামের মো. আবু তাহের মিয়ার ছেলে এড. মো. মুখলেছুর রহমান (আনারস) ছাত্র জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে আসছেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সরাইল উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। মুখলেছ ছিলেন ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুমোদিত উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মুখলেছ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে তখন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। মুখলেছ বলেন, আমি গত পাঁচ বছর মানুষের জন্য কাজ করেছি। এবারের নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তবে জামাল মিয়া (দোয়ত-কলম) নামের স্বতন্ত্র প্রার্থী হেভিওয়েট প্রার্থীদের কাঁপিয়ে তুলার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভোটারা। সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের কেউ কেউ বলছেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রর্থীর মধ্যে বিজয়ী প্রার্থী মো. আবু হানিফের সাথে জামালের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সরাইলের সকল শ্রেণির মানুষকে। ভোটের মাঠে নীরবে কাজ করা জামালও একটা ফ্যাক্টর। জামাল বলেন, আমি কোন রাজনৈতিক দলের নয়। আমি সরাইলের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাজের লোক। আমাকে ভোট দিয়ে সুযোগ দিলে কাজ করব। ৯টি ইউনিয়নের সকল ভোটারই আমার দলের লোক। তাদের দোয়া ও সমর্থনে আমি জয়লাভ করব ইনশাল্লাহ।