ছাগলে পাট খাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজীবপুর উপজেলায় হামিদুল ইসলাম (রাশিদুল) ৩৫ নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের টাঙ্গালিয়াপাড়া গ্রামে এঘটনা ঘটে। নিহত রাশিদুলের খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজীবপুর উপজেলা শহরে বরিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে তার স্বজন এলাকাবাসী ও বন্ধুরা। মিছিল থেকে তার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। এ সময় নিজ স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে রাশিদুলের স্ত্রী চায়না খাতুন বলেন, আমার স্বামী আর কয়েক দিন পর বিদেশ যাইতো ওরা আমার স্বামীরে মাইরা ফালাইলো। আমি এহন শিশু সন্তান নিয়া কিভাবে বাঁচুম। আমি এর সুষ্ঠু বিচাই চাই এ সময় বিক্ষোভ সমাবেশে শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়। নিহত রাশিদুলরা ৩ বোন ও একভাই। পরিবারের দারিদ্র্যতা নিরসনে বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল তার।বিবাহিত জীবনে তার দেড় বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান আছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পরেছে পিতা রফিকুল ইসলাম।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার মধ্যেরাতে রাজীবপুর থানায় নাসির উদ্দিন (৩৫), শাহ আলম (৩৫), নাছিমা (৪৫), চান মিয়া (৫৫), সানজিদা (২৫), মৌসুমি (২৫) নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। এ ঘটণায় জড়িত ৩জন আসামি গ্রেপ্তার করেছে রাজীবপুর থানা পুলিশ। আসামিরা হলেন নাসির উদ্দিন (৩৫), সানজিদা (২৫) এবং মৌসুমি (২৫)।
থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগ, স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রফিকুল ইসলামের সাথে প্রতিবেশি নাসির উদ্দিনের জমি নিয়ে বিরোধ। শনিবার সকালে রফিকুলের একটি ছাগল নাসির উদ্দিনের পাট ক্ষেতে গিয়ে কিছু গাছ খেয়ে ফেলে।বিষয়টি নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়।এসময়ে রফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয় নাসির উদ্দিন।
বিকেলে রফিকুল ইসলাম ও তার পুত্র হামিদুল ইসলাম (রাশিদুল) উপজেলা শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে পূর্ব টাঙ্গালিয়া পাড়া গ্রামে পৌঁছলে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা নাসির উদ্দিন ও তার সহযোগী এবং ভাতিজা রাজীবপুর সদর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহ আলমের নির্দেশে হামলা চালন। শাহ আলম দাঁড়িয়ে থেকে হামলার নেতৃত্ব দেন। নাসির উদ্দিন ছুরি দিয়ে আঘাত করেন হামিদুলকে এবং তার পিতাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় চান মিয়া, সানজিদা ও আকলিমা বেগম হামিদুল কে চেঁপে ধরে রাখে এবং মৌসুমী বেগম দা দিয়ে কোপ দেয়। স্থানীয়রা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও হাতে ধারালো অস্ত্র থাকায় তাদের নিবৃত্ত করতে পারে নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ইউপি সদস্য শাহ আলম দাঁড়িয়ে থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন এবং ঘটনার শেষ সময় পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন।
মারপিট করে গুরুতর আহত অবস্থায় হামিদুলকে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হামিদুলকে মৃত ঘোষণা করে।
হামলার নেতৃত্বে দেয়া ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন ও শাহ আলম সম্পর্কে চাচা ভাতিজা। ভাতিজার প্রভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রফিকুল ও তার প্রতিবেশির।
সরেজমিনে রোববার সকালে নিহত হালিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শুনশান নিরবতা, আগামী মে মাসের ১৫ তারিখে বিদেশ যাওয়ায় কথা ছিল।পাসপোর্ট ও ভিসা তৈরি করা ছিলো একথা বলেই বার বার মূর্ছা যাচ্ছিল তার মা হামিদা খাতুন।
রাজীবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরন মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ঘটনাটি অত্যান্ত দুঃখজনক জনপ্রতিনিধিরা হচ্ছে জনগণের সেবক। এলাকায় কোন সমস্যা তৈরি হলে জনপ্রতিনিধিরা সেই সমস্যার সমাধানে কাজ করবে। ইউপিসদস্য যদি হত্যকান্ডের নেতৃত্ব দেয় তাহলে বিষয়টি লজ্জাজনক। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আশিকুর রহমান বলেন,ঘটনা স্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত করছে। অভিযোগে উল্লখিত ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হচ্ছে তবে তারা পালিয়ে গিয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।