অসহ্য গরম আর লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে মশার যন্ত্রণা। কয়েক সপ্তাহ ধরে সারা দেশের বইছে তীব্র দাবদাহ। রাত-দিন অসহ্য গরম আর লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। বছরের পর বছর ধরে দেশের অন্যতম সমস্যা হয়ে রয়েছে মশার উৎপাত। একদিকে যেমন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, অন্যদিকে দিন-রাত তার যন্ত্রণায় মানুষের স্বস্তি মিলছে না। সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের এতো আয়োজনের পরও নগরীতে কমছে না মশার উপদ্রব। মশার উৎপাতে দিনরাত সমানভাবে যন্ত্রণাভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। কখনো ফগার মেশিন দিয়ে, আবার কখনো স্প্রে মেশিন দিয়ে ছিটানো হচ্ছে ঔষধ কিন্তু তারপরও কমছেনা মশার জ্বালাতন। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন অন্তত ১০ কোটি মানুষ। বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। বিশ্ব যত উষ্ণ হয়ে উঠছে, তার সঙ্গে বাড়ছে এডিস মশার উৎপাত। অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া ছড়ায়, যা এখন সারা বিশ্বেই পাওয়া যায়। কিন্তু এডিস এখনও সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েনি। কিন্তু জলবায়ুর বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী এডিস মশা সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। আবার সামনে আসছে বৃষ্টির সিজন, তখন মশার প্রজনন কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। আবার দেখা যায় যখন পানির দূষণ বাড়তে থাকে তখন কিউলেক্সের আধিক্য বেড়ে যায়। কারণ দূষিত পানিতে কিউলেক্সের মশা খাবার পায়। এডিস মশার মতো কিউলেক্স মশা ভয়াবহ না হলেও এ মশার কামড়ে অনেক সময় গোদরোগ হয়। এটি হলে হাত-পা ফুলে শরীরের বিভিন্ন অংশ বড় হয়ে যায়। ৪০ ডিগ্রি সেলিয়াসের বেশি তাপমাত্রা মশার বিস্তারকে বাধাগ্রস্ত করে। তারপরও এবছর তাপমাত্রা মশার বংশ বিস্তারের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাই বর্ষাকাল আসার আগেই কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে যথাযথ ব্যবস্থা। ডেঙ্গু মোকাবিলায় শহর জুড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এডিস মশার প্রজননস্থল এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত টায়ার, কমোড ও অন্যান্য দ্রব্যাদি অপসারণ করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ও ড্রেনগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকা মশার বংশবিস্তারের অন্যতম কারণ। তাই ড্রেনগুলোর ফ্লো সচল রাখতে যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। এখনই মশা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে মশার ঘনত্ব বেড়ে চরমে পৌঁছাবে যা ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।