তীব্র গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরম আর রোদে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র এ গরমে পরিশ্রমের পর ঠান্ডা শরবতে গলা ভিজিয়ে প্রশান্তির ঢেকুর তুলছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ শহরের অনেকে। তাই গরমে কালীগঞ্জ শহরের অলিগলিতে বেড়েছে শরবতের চাহিদা। রাস্তার পাশে ভ্যান-ঠেলাগাড়িতে এসব শরবত বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বাড়ায় পেশা পরিবর্তন করে অনেকেই ঝুঁকেছেন এ শরবত বিক্রিতে।
কালীগঞ্জ শহরের জনতা ব্যাংক মোড়, কালীবাড়ি মোড়, মেইন বাসষ্টান্ড, নিমতলা বামষ্ট্ডা, বাসটার্মিনাল, সরকারি নলডাঙ্গা ভুষন পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চিনি কলের সামনে, দুলালমুন্দিয়া বাজার, রেলগেট, বিহারি মোড় এলাকায় রাস্তার পাশে কিছু দূরত্বেই মিলছে শরবতের দোকান। এসব দোকানে সাধারণত লেবুর শরবত বিক্রি হচ্ছে যার প্রতি গ্লাস মূল্য ১০ টাকা। এ ছাড়া এ লেবু-পানির সঙ্গে শরবতের পাউডার মিশিয়ে তৈরি বিশেষ শরবত ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত শ্রমজীবি মানুষ আর পথচারীরা এ শরবতের ক্রেতা। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরম বাড়ায় শরবতের বিক্রিও বেশ বেড়েছে।
কালীগঞ্জ শহরের প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ডিপ টিউবয়েলের পানি দিয়ে ফ্রিজে তৈরি বরফ, লেবু, বেল, তোকমার দানা, চিরতা, ইসবগুলের ভূষি তালমাকনা, শিমুলের মূল, ঘৃতকুমারী, বয়রা, সোনাপাতা, হরিতকী, অর্জুনের পাউডার, যষ্টিমধু, কালিজিরা, শতমূল, সহ বিভিন্ন গাছ-গাছালী পাউডার দিয়ে এ শরবত তৈরি করে বিক্রি করা হয়। প্রতি গ্লাস শরবত বিক্রি করা হয় ১০/২০ টাকায় ও ভিআইপি শরবত বিক্রি করা হয় ৩০/৫০ টাকায়। শরবত বিক্রেতা বলছেন, রোদের তাপ বেশি থাকলে বেচা-বিক্রি ২৫০০ থেকে ৩০০ হাজার টাকা হয়। দিনে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে বেচা-বিক্রি একটু বেশি হয়। তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে এক হাজার টাকা এবং আবহাওয়া ঠান্ডা থাকলে ৬/৭শ টাকা বিক্রি হয়। বেচা-বিক্রির পরে ৪/৫শ টাকা লাভ হয়। চিকিৎসকরা বলেন, বরফ তৈরি করা পানি নদী অথবা খালের না হয়ে যদি টিউবয়েলের ফিল্টার করা পানি হয় তাহলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। গাছ-গাছালী শরবতসহ বিভিন্ন ফলমূলের শরবতে পানি শূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেশরবত বিক্রি করা মফিজুর বলেন, লেবুর শরবত বেশি বিক্রি করি। লেবুর রসের সঙ্গে চিনি আর বিট লবন মিশিয়ে শরবত বানাই। এ শরবতের সঙ্গে ট্যাং পাওডার দিলে ১০ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকার শরবত বিক্রি হয়। আগে ভ্যানে করে ফলমূল ও কাঁচামালের ব্যবসা করতাম এখন শরবত বিক্রি করি। যতদিন গরম থাকে ততদিন বিক্রি করবো। পরে অন্য ব্যবসায় যাবো। পেশা পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন যেটার চাহিদা সেই ব্যবসা করি।শরবত বিক্রির আগের পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় গিয়ে একসময় বিভিন্ন কাজ করতাম। কিছু দিন আগে শীতকালীন পোশাক জেকেট ও হরেক রকমের মোজা বিক্রি করেছি। গত রমজানের আগে নিজ বাড়িতে এসছি তাই বসে না থেকে শরবত বিক্রি করছি। এসব বিক্রি করা কঠিন কোনো কাজ না। অল্প পুঁজির ব্যবসা, লাভও ভালো।
রোদ আর গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও যেন স্বস্তি নেই। কাঠফাটা রোদে পথ-ঘাট সব কিছুই উত্তপ্ত। এ অবস্থায় চরম পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ছে পথচারীরা। তবে পথচারীরা তীব্র্র দাবদাহে কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেন বরফগলা নানা প্রকারের শরবতে।কালীগঞ্জ শহর ও গ্রাম এলাকার বিভিন্ন বাজারে অন্তত অর্ধশতাধিক অস্থায়ী শরবতের দোকান গড়ে উঠেছে। তীব্র গরমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব অস্থায়ী দোকান গুলোতে ভিড় যেন লেগেই থাকে। শহর ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ফুটপাতে হাঁটলে কিছুক্ষণ পরপর ভ্যানে মিলছে লেবু, তোকমা, এলোভেড়া, ইসবগুল, তরমুজ, নানা ফলের শরবত ও আখের রস। নানা শ্রেনী-পেশার মানুষজন তাদের তৃষ্ণা মেটায় এসব ভ্রাম্যমাণ বরফগলা শরবতের দোকানে।রিকশা চালক মোতালেব হোসেন বলেন, গরমে রিকশা চালিয়ে এসে এখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে শরবত খাই। অটোরিকশা চালক মুন্সি বলেন, স্বল্প আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষদের জন্য ১০-২০ টাকা দামের এইসব শরবত অনেক স্বস্তি দিচ্ছে।