ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকার দলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। নিখোঁজ হওয়ার ৮ দিন পর তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই সংসদ সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। এ হত্যাকন্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে তিন জন আটক হয়েছে, বুধবার রাতে খুলনা থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হল পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির দুই নেতা শিমুল ভূঁঁইয়া, তানভীর ভূঁঁইয়া এবং তার স্ত্রী। এই তিনজন নিয়ে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার হলো।গত ১৩ মে আনারকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ড ঘটাতে তারা সময় নেয় মাত্র ২০ মিনিট। ২০ মিনিটের এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ৫ কোটি টাকা চুক্তিতে নৃশংস ভাবে খুন করা হয় এমপি আনারকে। লাশের একাধিক টুকরো করা হয়। পরে চারটি ট্রলিব্যাগে করে ফেলে দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গেরই বিভিন্ন এলাকায়। আক্তারুজ্জামান শাহিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ৫ কোটি টাকায় খুনের কন্টাক্ট দেন সৈয়দ আমানুল্লাহ সাইদ নামের একজনকে। শাহিনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ কোটচাদপুর শহরে। এমপি আনারের ছোট বেলার বন্ধু ছিল ও অনেক ব্যবসা এক সাথে করেছেন।
প্রায় ২ বছর ধোরে এমপি আনারের সঙ্গে শাহিনের ব্যবসায়িক বিরোধ চলছিল। হুন্ডি ব্যবসার হাজার কোটি টাকা আনারের কাছে ছিল। এসব টাকা শাহীন আদায় করতে পারছিল না। গত পৌরসভা নির্বাচনে আনারের সাথে নাকি শাহিনের গোলযোগ হয় কোটচাদপুর শহরে। শাহিনের বড় ভাই কোটচাদপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে আনার নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে গেলে সেখানে গোলযোগ হয়। এসব নিয়ে আনার কে হত্যার পরিকল্পনা করে শাহিন। হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় খুলনা ফুলতলা এলাকার সৈয়দ আমানুল্লাহাহ সাইদ কে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহিদুর রহমান রিপনের নেতৃত্বে একটি দল মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে প্রথমে আমানুল্লাহ সাইদ কে আটক করার পরে আনারের হত্যার ঘটনা প্রকাশ পায়। এর পরে আটক হয় ফয়সল ওরফে জুয়েলকে। এমপি আনারকে ১৩ তারিখেই হত্যা করা হয়। মাত্র ২০ মিনিটের এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজন। আর এ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চারটি ট্রলিব্যাগে ভরে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। খুলনার ফুলতলা ডামুডা এলাকার বাসিন্দা আমানুল্লাহ দুই দফায় ২০ বছর কারাগারে ছিলেন। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি দুর্র্ধষ এই ক্যাডার একটি হত্যা মামলায় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ৭ বছর এবং ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর জেলে ছিলেন। সবশেষ এমপি আনার হত্যাকন্ডে চুক্তি নেওয়ার পর শাহিনের সঙ্গেই গত ৩০ এপ্রিল ভারতে যান। সঙ্গে যান শাহীনের এক গার্লফ্রেন্ড। ওঠেন কলকাতা নিউটাউন অভিজাত এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেনে। এই ভবনেরই ব্লকøক-৫৬ বিইউ’ ফ্ল্যাটটি আগে থেকেই শাহীনের ভাড়া নেওয়া ছিল। তবে ওই ফ্ল্যাটে ঘন ঘন যাতায়াত ছিল জিহাদ ও সিয়াম নামের দুই যুবকের। মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন এবং আমানুল্লাহ ৩০ এপ্রিল কলকাতায় যান। সবকিছু ঠিকঠাক করে শাহীন ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু আমানুল্লাহ রয়ে যান সেখানে। আমানুল্লাহ, মোস্তাফিজ, ফয়সাল, জিহাদ এবং সিয়াম মিলে সেই ফ্ল্যাটেই মিশন বাস্তবায়ন করে।মিশন বাস্তবায়নের পর ১৫ মে শাহিনের গার্লফ্রেন্ড শিলান্তি এবং আমানুল্লাহ ফ্লাইটে ঢাকায় চলে আসে। ১৭ মে তারেক মোস্তাফিজুর এবং ১৮ মে ফয়সাল বাংলাদেশে আসে।আক্তারুজ্জামান শাহীন ১৮ মে নেপাল এবং ২১ মে দুবাইতে চলে যান। এমপি আনারকে হত্যার পরপরই তাদের মধ্যে চারজনের দেশে ফিরে আসে। জিহাদ এবং সিয়ামের ঠিকানা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।নানা অপরাধে একসময় আনারের নামে ২২টি মামলা ছিল। ওই নির্দিষ্ট রুম খুলে তার ভিতরে রক্তের দাগ দেখতে পায় তারা
প্রথমে আনারের পরনের পোশাক দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে। আর তারপরই লাশ টুকরো টুকরো করে ট্রলিতে করে বাইরে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাকে হত্যার ছক তৈরি করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে বসে। ওই এমপি কবে কলকাতা ঢুকছেন কোথায় থাকবেন, তার সমস্ত তথ্যই জেনে নেন হত্যাকারীরা। এ কাজে তাদের সহায়তা করতে ওই ফ্ল্যাটটি তাদের দেন ভাড়া নেওয়া আখতারুজ্জামান।
ইতোমধ্যেই এ মামলার তদন্তভার ভারতের সিআইডির হাতে দেওয়া হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, এখন পর্যন্ত লাশ উদ্ধার হয়নি, আমরা মামলার তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের কাছে যা তথ্য আছে তাতে ১৩ তারিখে ওই এমপি এই আবাসনে ঢুকেছিলেন। এ ঘটনায় ব্যবহৃত একটি গাড়ি আটক করেছে পুলিশ। গাড়ির মালিককেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।