ময়মনসিংহের ত্রিশালে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে খুন করে মাটি চাপা দিয়ে রাখার ঘটনায় রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। এ ঘটনার মুলহোতা নিহত আমেনা খাতুনের স্বামী আলী হোসেনকে বুধবার (২২ মে) গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মূলত ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতেই স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় আলী হোসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শামীম হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দিনমজুর আলী হোসেনের কোন জমিজমা ছিল না। তিনি তার চাচার দেওয়া জমিতে অনেক দিন ধরে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিল। অভাবের সংসারে ছিল স্ত্রী আমেনা খাতুন এবং দুই ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৪) ও ছোট ছেলে আড়াই বছরের আনাছ। সংসারে সারা বছর অভাব অনটন লেগেই থাকত। তাই আলী হোসেন বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীর নামে এনজিও থেকে টাকা তুলত। বেশ কিছুদিন পূর্বে সে এনজিও থেকে ১ লাখ ৭০হাজার টাকা ঋণ নেয়। সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করা হত। প্রায়ই তার ছেলে ও বৌ না খেয়ে দিন কাটাত। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে দুই তিন মাস পূর্বেই আলী হোসেন সিদ্ধান্ত নেয় তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করবে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলী হোসেন গত ১৭ মে শুক্রবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে তার স্ত্রী আমেনা খাতুনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। আমেনা খাতুন ঘুম থেকে উঠে ঘরের মেঝেতে গিয়ে বসলে আলী হোসেন তার পিঠের পিছনে গিয়ে তার গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর তার ঘুমিয়ে থাকা দুই ছেলেকেও স্ত্রীর ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে আলী হোসেন তার মৃত স্ত্রীকে কাঁধে তুলে ঘরের পিছন দিয়ে জঙ্গলে নিয়ে রাখেন এবং এর পরপরই তার দুই ছেলেকেও ঐ জঙ্গলে নিয়ে আসে। তারপর ঐ গ্রামের একটি নির্জন মাটিতে গর্ত করে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে পুতে রাখে। এরপর থেকে আলী হোসেন বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিল।
এঘটনায় আমেনা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) ত্রিশাল থানায় আলী হোসেনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর ডিবি পুলিশের টিম এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও আসামি গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নামে। এরই একপর্যায়ে হত্যাকান্ডের মূল হোতা নিহত আমেনা খাতুনের স্বামী আলী হোসেনকে গত ২২ মে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, আসামি আলী হোসেনের বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় ২০১২ সালে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় সে ৫ বছর কারাভোগ করে ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে জামিনে মুক্তি লাভ করে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।