গ্রীষ্মের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার তালের পাটালি। কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রাম এলাকায় চৈত্র মাসের শেষে এবং বৈশাখের শুরুতে তাল গাছের রস দিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে তালের গুড় তৈরি করে যা খুব প্রসিদ্ধ এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।তবে এটি তৈরি করা প্রচন্ড সময় সাপেক্ষ এবং প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। সারাদিনে একটি তালগাছে তিন বার গাছে উঠতে হয় তারপর সেই গাছ ভাল করে পরিস্কার করে তাল গাছের ডগা কেটে সেই গাছে হাড়ি ঝুলিয়ে তালের রস সংগ্রহ করতে হয়।
তার পর সেই রস গাছ থেকে নামিয়ে উনুনে আগুন দিয়ে জ্বাল দিয়ে যখন গুড় দানা হয়ে আসবে তারপর তালের একটি ডগা দিয়ে সেটাকে হাতের সাহায্যে ভাল করে নাড়তে হবে যাতে গুড়বসে না যায়।তারপর ওই রস জালিয়ে ঘন হয়ে গেলে যে কোনো কাপড় বা বস্তার উপরে ফেলে দিতে হবে যেন আপনি যে কোনো ডিজাইন করতে পারেন। তার পর একটু ঠান্ডা হলে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো কিছু দিয়ে বিভিন্ন আকৃতিতে কেটে নিতে হবে।আর এই তালের গুড় দিয়ে প্রয়োজনীয় অনেক খাবারের মেনু তৈরি করতে পারেন। মূলত যে কোনো ধরনের পিঠে পায়েশ, সেমাই রান্না করা যায়।
এ ছাড়া এই গরমে তালের গুড় দিয়ে শরবত বাইনয়ে খেয়ে থাকেন অনেকেই।এই তালের গুড় কালীগঞ্জ শহরে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছে।
সাদা ধবধবে নিটোল চেহারা। গায়ে গুড়োঁ চিনির মতো গুড়ের গুঁড়ো লেগে। বৈশাখী গরম চড়তে শুরু করলে বাজারে দেখা মেলে তাল পাটালির। শীতে খেজুর গুড়ের পাটালির মতো এত বহুল ভাবে মেলে না যদিও। তবু অনেকের কাছে গরম কাল অপেক্ষার শুধু তাল পাটালির জন্যই। বলা হয় তালপাটালি যত সাদা আর নরম হবে তত তার স্বাদ। পাটালি সাদা করার জন্য গাছিরা অনেক সময় ফিটকিরি মিশিয়ে দেন।
তাতে গুড় কড়ার গায়ে ঘষতে হয় কমও পরিশ্রম কম হয়। কিন্তু ফটকিরি দিলে গুড় শক্ত হয়ে যায়।গরমে শরীর ঠান্ডা করার জন্য অনেকেই জলে মুড়ি ভিজিয়ে তার সঙ্গে তাল পাটালি দিয়ে খেয়ে থাকেন। তাল পাটালি তৈরী পরিশ্রম করছে গুড় ও পাটালি ব্যবসায়িরা। বিক্রেতারা বলছেন রাতের বেলা তালের যে রস পাওয়া যায় তা দিয়ে ভোরে গুড বানানো যায় না।
বিকালের রসে ভাল পাটালি হয়।সাংবাদিক বিপাশ বলছেন তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারাইল বাজার এলাকা থেকে এক কেজি পাটালি ত্রয় করেছেন ৩৫০ টাকা কেজি দরে।তিনি বলছেন তাল পাটালি দিয়ে পরোটা আর গরম রুটি খেতে মজায় আলাদা। কিন্তু এই চমৎকার বস্তু সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দেয়। শীতের সকালের চিঁড়ে-চাই-মুড়ি খেতেচায় অনেকেই।ছাড়া পুরোনো মামারবাড়িতে বাক্স বাক্স মোয়া,নারিকেলনাড়-,তালেরপাটালিসহ অনেক কিছু, সামনে হাজির হতো একসময়।অনেকেই বলতেন কই গো, কোথায় গেলে বুড়ো গিন্নি দেখ নতুন তালের পাটালি কিনে এনেছি।
তাল পাটালির সেন্ট অন্য রকম ঘরে রাখলে ব্যাপক ভাবে গ্রান বের হয়। আ এ ঘ্রানেই মানুষের মনে হয় না খেলে নাকি সাধ মেটে না।
এখন তাল পাটালির সময়। এই সময় হয়তো বাড়ির সামনে পাবেন তালের রস। সকালে মিলতে পারে, আবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়। গুড় বিক্রেতরা বলছেনগুড় করলে যে তাপমাত্রায় তাতে গুড়ে জীবাণু থাকে না এটা নিঃন্ধহে খাওয়া যায়। তাল পাটালি তৈরি বড় কঠিন কাজ। রাতের বেলা যে রস হয়, তা ভোরে গুড় করা যায় না। দুপুর,বিকেলের রসে ভালো পাটালি হয়, আবার ভালো গুড়ও তৈরি হয়। যে পাটালি যত সাদা হবে তা তত স্বাদের হবে, আবার ঠিক ততটাই নরম হবে, হাত দিলে ভেঙে যাবে।
বিক্রি করতে দাম টা অনেক বেশি। ক্রেতারা এত বেশি দামের তাল পাটালি অনেকেই কিনতে চায় না। আবার অনেকেই সখ করে ক্রিনে থাকে থাকে শৌসুমি তাল পাটালি।