আইলা সিডরের মত ভয়াবহ ঝড় জ্বলোচ্ছাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই ঘূর্ণিঝড় রিমালের আশংকায় আতঙ্কিত খুলনার উপকুলিয় জনপদ দাকোপের ২ লক্ষাধীক মানুষ। বেড়ীবাঁধের উপর অনিরাপদ বসবাসকারী কালাবগীর ঝুলন্ত পাড়ার বাসিন্দারা ভেবেই নিয়েছেন মৃত্যুকে সঙ্গি করে তাঁদের বেঁচে থাকার এই সংগ্রাম।
বঙ্গোপসাগর থেকে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে নেমে আসা বৃহৎ শিপসা নদীর মোহনার তীর ঘেষা দাকোপের শেষ জনপদ কালাবগী। অব্যহত নদী ভাঙনে বিলীন হতে হতে গ্রামের আয়তনের পাশাপাশি জনসংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। বসত ভিটে হারা মানুষেরা নিরুপায় হয়ে চলে গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। জীবিকার তাগিদে সেখানে থাকা অধিকাংশ মানুষ বেড়ীবাঁধের বাইরে কালাবগী ঝুলন্ত পাড়ায় ঝুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। ঝড় জ্বলোচ্ছাসে সেখানে তাদের নেই কোন নিরাপত্তা।
চলমান ঘূর্ণিঝড় রিমালের আতঙ্কে সেখানকার বাসিন্দাদের মাঝে তেমন কোন প্রভাব দেখা যায়নি। সাধারণ সতর্ক বার্তায় তারা ঝুপড়ি ঘর ছাড়েনা। কালাবগী ঝুলন্ত পাড়ার বাসিন্দা ফারুখ ফকিরের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদী ভাঙন ঝড় জ্বলোচ্চাসের সাথে আমাদের বসবাস। সুতরাং বেঁচে থাকার বিশেষ কোন নিরাপত্তা ভাবনা আমাদের মাথায় আসেনা। একই পল্লীর হাফিজুর গাজী বলেন, সরকারী লোকজন মাইকিং করে আমাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলে। তবে আমরা আসলে সব সংকেতের অর্থ বুঝিনা। যতক্ষন টিকে থাকতে পারি এই ঘর ছেড়ে কেউ যেতে চায়না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানায়, সুতারখালী ইউনিয়নে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অনিরাপদ ঝুঁকিপূর্ন বসবাস করে। নদীতে মাছ আহরণ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। যে কারণে নদীর তীর তারা ছাড়তে চায়না। প্রাকৃতিক দূর্যোগে তাদের নিয়ে আমরা সার্বক্ষনিক দুঃশ্চিন্তায় থাকি। কারণ তাদের বাধ্য করে ছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া যায়না। চলমান ঝড় মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে তারা সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে দাবী করেছেন।
এ দিকে দাকোপ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, উপজেলার সব আশ্রয় কেন্দ্র এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন গুলো আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গবাদী পশুর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার মোমবাতিসহ দূর্যোগকালীন প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও শিক্ষকরা মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে মানুষেরা আশ্রয় কেন্দ্রে সহসা যেতে চায়না। আমরা বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের কেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করার কাজ করছি। উল্লেখ্য চারিপাশে নদী বেষ্টিত উপকুলিয় উপজেলা দাকোপ প্রতি বছর প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
১৫ বছর আগে ২৫ মে ২০০৯ আইলার তান্ডবে বিধবস্ত হয় এই জনপদ। দীর্ঘ ২১ মাস পানি বন্দি অবস্থায় দূর্বিষহ জীবন যাপনে বাধ্য হয় দাকোপের দু’টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ। ধবংস হয়ে অসংখ্য ঘরবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থাপনা। রাস্তা ব্রীজ কালবার্ট নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন নতুন দূর্যোগ এ অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার উপর মারাত্নক প্রভাব ফেলে।