গ্রাম বংলার মেঠোপথ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশি প্রজাতির খেজুরগাছ। একসময় গ্রামাঞ্চলে পথের দুধারে দেখা যেত। আর খেজুরের মৌসুমে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকত। কাঁচা খেজুরের রং সবুজ এবং তা পরিপক্ব হলে গাঢ় হলুদ রং ধারণ করে। খেজুরের কাদি কেটে পানিতে এক রাত্রি ডুবিয়ে রাখলেই পেকে যায়। দেশি প্রজাতির এই ফলে প্রচুরভিটামিন এ,সি,কে, ক্যালসিয়াম,আয়রন, বিটা-ক্যারোটিনসহ স্বাস্থ্যকর বিভিন্ন উপাদান রয়েছে।এটি হূদরোগের জন্য উপকারী, তাছাড়া মানবদেহে রক্ত তৈরিতে সহায়ক ও হজমবর্ধক। এটি পাকস্থলী ও যকৃতের শক্তি বাড়ায়। ঋতু পরিবর্তনকালীন রোগ পপ্রতিরোধে এ ফল দারুণ কার্যকর।
খেজুর গাছ প্রধানত মরুদেশীয় উদ্ভিদ। এদেশে এর একটি মাত্র প্রজাতি জন্মে। সাধারণত কেউ এটি রোপণ করে না। মানুষ ও পশু পাখিরা খাওয়ার পর মাটিতে বীজ ফেললে সেটা থেকে আপনা আপনি জন্মে। ভাঙন কবলিত এলাকায় ভাঙন রোধে এ গাছ খুবই কার্যকর। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করায় এ গাছ বিলুপ্তির পথে। বন বিভাগের আওতায় বাঁধ ও নদী তীরে এ গাছ রোপণের উদ্যোগ নিলে এটি কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।
মধু মাসে মধু ফল বারো মাসে বারো ফল, এক মাসে তেরো ফল কবির এ বানীর একটি ফল দেশি খেজুর বা বুনো খেজুর। কালীগঞ্জ উপজেলায় সকল এলাকায় মাঠে মাঠে, রাস্তার ধারে, বাাড়ির আঙিনায় গাছে গাছে দেশি খেজুরের সমরোহ শোভা পাঁচ্ছে। যেদিকে চোখ যায় সেই দিকে হলুদ রংয়ের দেশি খেজুর।শিশুদের কাছে প্রিয় ফল দেশি খেজুরের এবছর ফলন ভালো হয়েছে। হলুদ রঙে দেশয়ি খেজুরের কাঁদিতে ভরে গেছে গোটা খেজুর গাছের মাথা তথা উপরের অংশ। কয়েক দিনের মধ্যেই পাকতে শুরু করবে দেশি খেজুর। দেশিয় খেজুর সুমিষ্ট ফল। দেশিয় খেজুরকে কেউ কেউ বুনো খেজুর নামে ডাকেন। কেননা এটা কেউ চাষ করে না। এ দেশের বন জঙ্গলেই গাছটি প্রধানত জন্মে থাকে। সাধারণত পতিত অনুর্বর জমিতে বাঁধের ধারে, পুকুর পাড়ে, জমির আইলে, বাড়ি ও বাগানের চারদিকে, পথের দুই পাশে সারি করে খেজুর গাছ লাগানো হয়। তবে তা ফলের জন্য নয়, রসের জন্য। গাছের মিষ্টি রস জ্বাল দিয়ে তা থেকে গুড়-পাটালি তৈরি করা হয়। এ দেশে খেজুরকে গুড় উৎপাদনকারী ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শীতের দিনে নলেন গুড়ের স্বাদ সবার কাছেই লোভনীয়। খেজুর অন্যান্য ফসলের মতো ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় না,বসতবাড়ি, মাঠ, রাস্তার ধারে জন্মে। তাই ঠিক কতটুকু জমিতে খেজুরের আবাদ হচ্ছে তার হিসাব কষা মুশকিল।
সাধারণত গাছেই কাঁদিতে দেশি খেজুরের ফল পেকে ঝরে পড়ে, সংগ্রহ করা হয় না। সব ফল একসাথে পাকে না। কয়েক দিন ধরে পাকতে থাকে। ফল পাকার সময় গ্রীষ্মকাল। পাকা ফল পাখিরা খায়। ফল মাটিতে ঝরে পড়ে সেখানেই প্রাকৃতিক ভাবে চারা তৈরি হয়। খাওয়ার জন্য ফলের রঙ সবুজ থেকে হলুদ হলে কাঁদির পাটি কেটে কাঁদিসহ সংগ্রহ করা হয়। ঘরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যে সেসব পরিপক্ব ফল পাকতে শুরু করে। পাকলে ফলের শাঁস নরম হয় ও লালচে মেরুন রঙ ধারণ করে। একটি গাছ থেকে ১০-২৫ কেজি ফল পাওয়া যায়। এ খেজুর বেশি সুস্বাদু না হলেও এটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে আছে মানবদেহের উপকারী উপাদান পটাশিয়ম সল্ট ও খনিজ লবণ।
এ বছর কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক আকারে হয়েছে দেশিয় খেজুর। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর দেশি খেজুরের চাষ সম্প্রসারনে ইতোমধ্যে একটি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহন করেছে।