গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার অর্ধশত ছোট বড় বিলের প্রায় শতাধিক সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালী মহল। যার ফলে বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, পরিবেশ বিপর্যায়, নৌ চলাচল ব্যাহত ও কৃষি কাজ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
দখলকৃত খাল উদ্ধারে প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উপজেলা প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করায় জনমনে নানা ধরণের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মৎস্যজীবী ও সাধারণ জনগণ দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলকৃত খাল উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার রামনগরের বিল, রথিয়ারপাড় বিল, মাছপাড়ার বিল, কুমুরিয়া বিল, বৈকণ্ঠপুর বিল, লখন্ডার বিল, মুশুরিয়ার বিল, পিড়ারবাড়ি বিল, পলোটানা বিল, ধোরাল বিল, চিথলিয়ার বিল, পশ্চিম দিঘলিয়ার বিল, পূর্বপাড়া বিল, চিত্রাপাড়া-শুয়াগ্রাম বিল, সাতুরিয়ার বিল, কান্দি বিল, আশুতিয়ার বিল, পোলশাইল বিল, বর্ষাপাড়া বিল, ছত্রকান্দা বিল, দেওপুরা বিল, সোনাখালি বিল, ফুলবাড়ি বিল, কোনের বাড়ি বিল, বহলতলী বিল, চাটখালির বিল, তারাইল বিল, গোপালপুর বিল, চরগোপালপুর বিল, গৌতমেরা বিল, মাচারতারা বিল, গজালিয়া বিল, তালপুকুরিয়া বিল, হিজলবাড়ি বিল, তারাকান্দর বিল, কুঞ্জবন বিল, পারকোনা বিলসহ প্রায় অর্ধশত ছোট বড় বিল রয়েছে। এ সকল বিলের প্রায় শতাধিক খাল দখল করে নিয়ে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালী মহল।
সরেজমিনে জানাগেছে, উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের দেওপুরা খাল দখল করে মাছচাষ করেছেন বহলতলী গ্রামের পরশ সিকদার, সোনাখালি কুমলাবতী খাল দখল করে মাছ চাষ করেছেন ইউপি সদস্য লায়েক শেখ, তারাইল খাল দখল করে মাছ চাষ করেছেন নির্মল মাঝি, ফুলবাড়ি খাল দখল করে মাছচাষ করেছেন ইউছুব আলী দাঁড়িয়া, কোনেরবাড়ি খাল দখল করে মাছ চাষ করেছেন মুজিবুর রহমান শেখ, কুঞ্জবনের খাল দখলে করে মাছ চাষ করেছেন বিপুল বাড়ৈ।
অদৃশ্য কারণে এসব খাল উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এসব খাল দখলের কারণে নৌ চলাচল ও খালগুলোর আশপাশের এলাকার কৃষকগণের কৃষি কাজ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিলের পরিবেশ। ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছ ও জীব বৈচিত্র্য।
দখলকৃত খাল থেকে পূর্বে যে সকল মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা এখন প্রভাবশালীদের বাঁধার মুখে খালগুলো থেকে মাছ ধরতে পাঁচ্ছেন না। যার ফলে এসব মৎস্যজীবীরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উপজেলার গজালিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী সুরেশ বাড়ৈ বলেন, আগে আমরা এলাকার বিভিন্ন খাল বিল থেকে দেশীয় মাছ ধরে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতাম। এই মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমরা আর এসব খাল বিল থেকে মাছ ধরতে পারছি না। যার ফলে আমরা এখন বেকার হয়ে পড়েছি।
উপজেলা দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু বলেন, উপজেলার ছোট বড় প্রায় শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। এতে দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং নৌ চলাচল বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন বিলের নকশা দেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব খাল উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখিত দখলকারীদের কাছে খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা কোন প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার বলেন, দখলকৃত খালগুলো উদ্ধারে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।