‘পাগল’ তালিকায় রাজশাহীর ১২৫ তরুণ-তরুণী!

এফএনএস (এস.এইচ.এম তরিকুল ইসলাম; রাজশাহী) :  : | প্রকাশ: ৯ মে, ২০২৩, ০৩:২৫ এএম

জীবনের প্রথম ভোটার হতে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে অপ্রকৃতিস্থ (পাগল) তালিকায় রাজশাহীর ১২৫ তরুণ-তরুণীর নাম পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এমন ঘটনা শুধু রাজশাহীতেই নয়, সারা দেশে অন্তত ১০ হাজারেও বেশি অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল ভোটার পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিস। যেগুলো সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিস ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে বলেও জানা গেছে। তবে এমন ভুল মেনে নিতে পারছেন না এসব তরুণ-তরুণীরা। তাদের ভাষ্য, কিছু কিছু ভুল মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। 

এদের মধ্যে এক তরুণীর নাম উম্মে হাবিবা। সে রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছেন। তিনি কিছুদিন আগে তার নিজ গ্রাম রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম লেখান। করেন অনলাইন ফরম পূরণ। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। তবে খোঁজ নিয়ে হাবিবা জানতে পারেন, তার নামের তথ্যের বিপরীতে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ বা পাগল উল্লেখ থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্র হচ্ছে না। কিছুদিন আগে স্থানীয় নির্বাচন অফিস তাকে ফোন করে ডেকে একটি প্রত্যয়ন দিয়েছে যে, তিনি পাগল নন। উম্মে হাবিবা বলেন, স্থানীয় নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার হওয়ার আবেদন করেছিলাম। কীভাবে ভুল হলো জানি না। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছি না। তবে তারা একটি প্রত্যয়ন দিয়েছে। এ ঘটনায় হাবিবার বাবা কাচারি কোয়ালীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, তার মেয়ে একটি মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করে। অথচ তার মেয়েকে দেখানো হচ্ছে অপ্রকৃতিস্থতা বা পাগল। একই অবস্থা ভবানীগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলামের। তিনি বলেন, আমি ভোটার আইডি না পেয়ে যোগাযোগ করি। এ অবস্থা জেনে তাদের পরামর্শে তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি। এখন বিষয়টির দ্রুত সমাধান চাই।

আমিনুল আর হাবিবার মতো রাজশাহীতে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদনে ভুল থাকায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন ১২৫ তরুণ-তরুণী। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ারে এসব নতুন ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্যের বিপরীতে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ বা পাগল উল্লেখ থাকায় তারা জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পাচ্ছেন না।

রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় ম্যাডনেস বা ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ (পাগল) তালিকায় আছেন ১২৫ জন। তাদের মধ্যে বাঘা উপজেলায় ৫ জন, বাগমারায় ১৭, তানোরে ১১, পবায় ৩০, চারঘাটে ৯, পুঠিয়ায় ৮, মোহনপুরে ৬, দুর্গাপুরে ৭ ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০ জন। এছাড়াও রাজশাহী সিটি করর্পোরেশন (রাসিক) এলাকার বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ৫ জন, শাহ্ মখদুম থানা এলাকায় ১ জন, রাজপাড়া থানায় ৫ এবং মতিহার এলাকায় ১ জন রয়েছে।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন ভোটার হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে আবেদনকারীর বিভিন্ন ধরনের তথ্য চাওয়া হয়। ‘অন্যান্য তথ্য’ অংশে ‘অসমর্থতা’ শিরোনামে একটি ছক রয়েছে। এই ছকে মূলত দৃষ্টি, শারীরিক, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধিতা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও অপ্রকৃতিস্থতা বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। অনেকে না বুঝে সেখানে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ নির্বাচন করেন। ফলে ডেটাবেজে তাদের তথ্যে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী আদালত স্বীকৃত কোনো অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল ভোটার হতে পারবেন না। এর বাইরে সবাই ভোটার হতে পারবেন। পাগলদের নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে বাধা নেই। কোনো সুবিধা বা সেবা গ্রহণের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র যখন যাচাই করা হবে, তখন তথ্যভা-ারে ‘অপ্রকৃতিস্থতা’ দেখাবে। সেক্ষেত্রে তিনি সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

তিনি বলেন, শুধু রাজশাহীতেই নয়, সারাদেশে অন্তত ১০ হাজারেও বেশি অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল ভোটার পাওয়া গেছে। এগুলো নিয়ে আমার কাজ করছি। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ডেকে নিয়ে এসে আবার সংশোধনের জন্য ঢাকায় পাঠাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুত এগুলো সমাধান হয়ে যাবে। 

 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW