আয়কর আইনের ওপরে ধনী, নিচে গরিব

এফএনএস: : | প্রকাশ: ৭ জুন, ২০২৩, ০৬:৪৯ এএম

বাংলাদেশের নতুন বাজেটে রিটার্ন দাখিল করলেই দুই হাজার টাকা কর দেয়ার যে প্রস্তাবনা করা হয়েছে, এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় চাঁদাবাজি বলেও কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যম গুলোয় অনেকেই এই প্রস্তাবের সমালোচনা করে একে অন্যায্য বলে বর্ণনা করেছেন। আবার অনেকে এর পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন। বাজেটে বলা হয়েছে, আয় না থাকলেও একজন টিআইএনধারী ব্যক্তিকে আয়কর সনদ নিতে হলে দুই হাজার টাকা নূন্যতম আয়কর দিতে হবে। ৩৮ ধরনের সেবা নিতে হলে এই আয়কর সনদ জমা দিতে হবে। চলতি অর্থবছর থেকে ৩৮ ধরনের সেবা নিতে করদাতাদের রিটার্ন জমার রসিদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয় এবং আসছে বাজেটে এ বিধান আরও কঠোর করা হচ্ছে। করযোগ্য আয় থাকুক আর না-ই থাকুক, নূন্যতম ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কর দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। তবে “যার করযোগ্য আয় নেই তার জন্য কর বাধ্যতামূলক করা বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য। মানুষের জন্য বোঝা হয়ে যাবে, এ বিষয়গুলো নিয়েও ভাবতে হবে।  অনেকে ধারদেনা করে জীবন চালাচ্ছেন। তা ছাড়া ১৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবারের কখনো কখনো পুরো দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে, ৭১ শতাংশ পরিবার প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খেয়েছে। ৩৭ শতাংশ পরিবার মাঝেমধ্যে কোনো এক বেলা খাবার না খেয়ে থেকেছে। তাঁদের এক বড় অংশকেই কোনো কোনো কারণে সরকারি সেবার জন্য যেতে হয় বা হবে। আর সে জন্য আয়কর দেওয়ার নম্বর (টিআইএন) লাগবে এবং এই নম্বরের জন্য তাদের দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। তবে যে কর দেওয়ার যোগ্য, ক্ষমতা-আয় আছে সেই তো কর দেবে, কিন্তু যার নাই তার ওপর আবার বসিয়ে দিলাম। এটা সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক। নৈতিকভাবেও এটা ঠিক না। এটা অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে। ফলে মূল যে উদ্দেশ্য ছিল সেটিও নষ্ট হয়ে যাবে।‘বর্তমানে মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে। আয়কর দেয়া নিয়ে তাদের মধ্যে এখনো ভীতিও রয়েছে। সেখানে আয়কর রিটার্ন দাখিলে দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হলে সেটা অনেককে কর দেয়া থেকে অনুৎসাহিত করে তুলতে পারে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন নম্বর থাকলেই বছর শেষে আয়ের হিসাব দিতে হয়। নতুন অর্থবছরে এরকম সেবার তালিকা বাড়িয়ে ৪৪টি করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এর ফলে যারা এসব সেবা নিয়ে আসছেন, কিন্তু কর দেন না, তাদের কাছ থেকে রাজস্ব পাওয়া যাবে। তাই “আমাদের কঠোর আইন করতে হবে, আমাদের ইতোমধ্যে কিছু আইন রয়েছে এবং আরও আইন আসছে তার জন্য আরও ভালো তত্ত্বাবধায়ন দরকার। এ ছাড়া বাজেটে এমন কিছু রাজস্ব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে কিছু পণ্যমূল্য বাড়বে, যার প্রভাব সরাসরি মানুষের, তথা ভোক্তার ওপর পড়বে। সিপিডি বলছে, বাজেটে যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই বাস্তবভিত্তিক নয়। তাই এসব লক্ষ্য অর্জন শেষ পর্যন্ত হবে না। কেননা এ বাজেটে কাঠামোগত, অনুমিতিগত দুর্বলতা রয়েছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW