এবারও ঈদযাত্রায় মহাসড়কে ভোগান্তির শঙ্কা

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: : | প্রকাশ: ৩০ মার্চ, ২০২৪, ০৩:০৮ এএম

ঈদে প্রতি বছরই ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকে বিভিন্ন মহাসড়কে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তখন এ চাপ বেড়ে যায় বেশ কয়েক গুণ। অন্যদিকে বছরের পর বছর ধরে মহাসড়কগুলোতে চলমান সংষ্কার কাজ ও পর্যাপ্ত যানবাহন ধারণের ক্ষমতা না থাকায় সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানযট। ঘন্টার পর ঘন্টা একই জায়গায় স্থির হয়ে থেকে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। দুর্ভোগ হবে না- প্রতিবছর এমন আশ^াস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয় না। চলতি বছরেও ঈদুল ফিতর ঘিরে এই উৎকণ্ঠা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। যদিও এবার ঈদে নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা শোনা গেছে। জানা যায়, এবার হাইওয়েতে ঈদযাত্রায় যানজট কমাতে সহায়তা নেওয়া হবে ড্রোনের। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এবারের ঈদে সম্ভাব্য কোন কোন এলাকায় জট, যানজট বা ব্লক তৈরি হতে পারে সেটা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এবার হাইওয়েতে ঈদযাত্রায় ড্রোনের সহায়তা নিচ্ছি। ড্রোনের সহায়তায় চিত্র দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবো। তিনি আরও বলেন, অনেক রাস্তা চার লেন হচ্ছে। কোথাও কোথাও হয়ে গেছে। এখন রাস্তায় যদি কোনো যানবাহন তাৎক্ষণিক অকেজো হয়ে পড়ে তাহলে সেটি সরানো সহজ হবে। ত্রুটিপূর্ণ কোনো যানবাহন যাতে ঈদে সড়কে না নামে সেটা নিশ্চিত করতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। মূলত ঈদযাত্রায় কয়েকটি মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল-বগুড়া মহাসড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন হয়েছে বহু আগে। পদ্মা সেতুও হয়ে গেছে। ফেরি আর লঞ্চে নেই সেই চিরচেনা ভিড়। পদ্মা সেতুতে রেল চলছে। ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইনও হয়ে গেছে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেলপথে। কাজ শেষ হয়েছে ঢাকা-এলেঙ্গা চার লেনের। অনেকটাই গুছিয়ে আনা গেছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরে যাওয়ার বিআরটি প্রকল্পের কাজ। এদিকে পুরোদমে চলছে হাটিকুমরুল-এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্পের কাজ। তবে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় সড়কটি কখনও সংকুচিত, কোথাও প্রশস্থ আবার কোথাও একমুখি। এতে করে মাঝে মধ্যেই যান চলাচলে ধীরগতির কারণে যানজটসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। তবে নির্মাণ কাজের গতি বাড়িয়ে ভোগান্তিমুক্ত ঈদযাত্রা নিশ্চিত করার দাবি সাধারণ মানুষসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। জানা গেছে, সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্প-২ এর আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০.৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৬ সালে অনুমোদন হলেও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদার কাজ শুরু করেন ২০১৯ সালের মার্চে। করোনাকাল, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজে ধীরগতি নেমে আসে। এসব জটিলতা কাটিয়ে আবারো কাজ পুরোদমে চলমান হয়েছে। এরই মধ্যে বেড়েছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন। বিভিন্নস্থানে যান চলাচলে ২০টি আন্ডারপাস খুলে দেওয়ায় এই পথে চলাচলকারী মানুষরা সুফল পেতে শুরু করেছে। ফোর লেন প্রকল্পে বগুড়া অংশে কাজের অগ্রগতি আগের চেয়ে বেড়েছে, গোটা প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৩ ভাগ। সড়ক উন্নয়নসহ প্রকল্পের আওতায় রাস্তার উভয় পাশে স্লো মুভিং ভেহিক্যাল ট্রাফিক লেন, ছয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণ, ৩৫টি সেতু, রেলওভার পাস ২টি, ৩৯টি আন্ডারপাস, ১৮০টি কালভার্ট এবং পথচারী পারাপারের জন্য ১১টি পথচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ৭০ কিলোমিটার কংক্রিট পেভমেন্ট আরসিসি এবং ১২০ কিলোমিটার বিটুমিন কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া অংশে ৬৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। চার লেনের পাশাপাশি মহাসড়কের দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য দুটি সংরক্ষিত লেনও থাকবে। প্রকল্পের বগুড়া অংশে রাস্তার উন্নয়নসহ ২টি সেতু, ১১টি আন্ডারপাস, ১টি রেলওয়ে ওভারপাস, কালভার্ট এবং বিভিন্নস্থানে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য বাস-বে নির্মাণ করা হচ্ছে। সাসেক-২ প্রকল্পর বগুড়ার বনানী-মোকামতলা অংশের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানান, শিগগিরই বগুড়ার ফুলতলা এলাকায় আন্ডারপাস ও তিনমাথা রেলওয়ে ওভারপাস যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এতে করে যান চলাচল সহজ হবে। তাই ঈদযাত্রায় ভোগান্তির কোনো শঙ্কা নেই বলে আশ^াস দেন তিনি। এদিকে এই মহাসড়কে আশ^াস পাওয়া গেলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি নিয়ে রয়েছে চরম উদ্বেগ। সবে শুরু হয়েছে এটির চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প। ঈদ যখন আসন্ন, তখন এ সড়কে উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬ শতাংশ। ফলে যেসব পথে ঈদের বাড়তি চাপ নামে, তার প্রায় সবগুলোতে স্বস্তির আশা থাকলেও শঙ্কা আছে এ মহাসড়ক নিয়ে। উন্নয়ন কাজের কারণে এ পথে ভোগান্তি হয় কতটা, তা নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ। অন্যদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত সাড়ে ২০ কিলোমিটার সড়কে সাত বছর ধরে চলছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। চলমান এ প্রকল্পেরই কিছু কিছু লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এ পথে তেমন জটলা হবে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এ প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। তবে কাজ চলমান থাকায় কয়েক বছর ধরে এ পথ পাড়ি দিতে কখনো কখনো কয়েক ঘণ্টা লেগেছে। পরিস্থিতি সামলাতে কখনো বাড়তি সময় নিয়ে যাত্রা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এদিকে সড়কপথে যানজট নিরসনে কয়েকটি ব্যবস্থা নিলে ঈদযাত্রা কিছুটা হলেও নির্বিঘ্ন হতে পারে- এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি, পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় ঈদযাত্রায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাতটি কৌশল নির্ধারণ করা হয়। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে- ঈদের আগে-পরে তিনদিন করে মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখা; ঈদের দিনসহ আগের ৭ দিন এবং পরের ৫ দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখা; শিল্পকলকারাখার শ্রমিকদের একত্রে ছুটি না দিয়ে ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা; জাতীয় মহাসড়ক ও করিডরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঈদের সাত দিন আগেই শেষ করা; সারা দেশের মহাসড়কগুলোর চিহ্নিত ১৫৫টি যানজট স্পট ঈদের আগে ও পরে নিবিড় মনিটরিংয়ের আওতায় আনা ইত্যাদি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কৌশলের সবক’টি কাজে লাগাতে পারলে ভালো। তবে শিল্প-কলকারাখানার শ্রমিকদের ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার বিষয়টি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ মূলত ঈদের সময়টিতেই সবাই বাড়ি যেতে চান স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার লক্ষ্যে। তবে অন্যান্য কৌশল বাস্তবায়ন করা কঠিন নয়। এসব কৌশল বা পদক্ষেপ বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারগুলোকে কাজে লাগানো উচিত। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঈদযাত্রা হয়ে উঠতে পারে আনন্দমুখর।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW