রাস্তা নেই তবু ও সরকারী টাকায় ৬৫ লাখ টাকার ব্রীজ নির্মাণ

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) :  : | প্রকাশ: ১১ জুন, ২০২৪, ০৩:৪৪ এএম

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে মানুষ চলাচলের কোনো রাস্তা নেই, বিশেষ কোনো রাস্তার প্রয়োজন নেই তবু ফসলি মাঠের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে একটি সেতু। এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগ কতিপয় ব্যক্তির জমির ফসল ওই মাঠ থেকে বাড়িতে তোলার রাস্তা সহজ করতেই সরকারি খরচে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও সেতুর দুই পাশে নতুন সংযোগ সড়ক কবে তৈরি করা হবে তা কর্তৃপক্ষসহ ওই জমির মালিকও বলতে পারেন না। দুই পাশে সংযোগ সড়কহীন অবস্থায় একাকী দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। পাতবিলা গ্রামের কৃষকরা শুনেছেন সেতুর দুই পাশে নাকি সড়ক তৈরি হবে। কিন্তু সেই সড়ক কবে হবে এবং কেন হবে তা কেউ জানেন না। মাঠে কাজ করা কৃষকরা জানালেন, এ সেতুটি আমাদের কোনো কাজে আসবে না। অনেকে বলছেন কোনো কারণ ছাড়াই সেতুটি সরকারি খরচে কেন তৈরি করা হয়েছে তার সঠিক কারণ কেউ জানতে পারে নাই।

কালীগঞ্জ উপজেলার পাতবিলা এলাকায় খালের উপর ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা বাদেই নির্মাণ করা হয়েছে ব্রীজ। ব্রীজের সাথে সংযোগ সড়ক না থাকায় নির্মাণের পর থেকে কোন কাজেই আসছে না ব্রীজটি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে পাতবিলা শবির জমির নিকট খালের উপর গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার। এই ব্রীজটি নির্মাণে চুক্তি মূল্য ছিল ৬৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৪ টাকা। ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার মেসার্স সূর্য এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রীজটি নির্মাণ করে। এরপর ২০২৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ব্রীজটি উদ্বোধন করেন ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এলাকাবাসী জানায়, এর আগে পাতবিলা খালের উপর একটি কালভার্ট ছিল। সেটি ভেঙে এই ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ব্রীজটি কোন কাজেই আসছে না। ব্রীজের উভয় পাশে রাস্তা না থাকায় ব্রীজটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। রাস্তার ব্যবস্থা না করে ব্রীজ নির্মাণ করে সরকারের লাখ লাখ টাকা নষ্ট করা হয়েছে বলেও ধারণা এলাকাবাসীর। 

শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, পাতবিলা খালের উপর যে ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটি কোন কাজেই আসছে না। লাখ লাখ টাকা খরচ করেও কোন উপকার হচ্ছে না সাধারণ মানুষের। রাস্তা না থাকায় কেউ যাতায়াত করতে পারছে না। ব্রীজটি এলাকার মানুষের কোন উপকারে না আসার কারণে অকেজো হয়ে পড়ে থাকবে। 

এ ব্যাপারে শিমলা-রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির চৌধুরি জানান, মাঠের ধান নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্রীজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এই প্রকল্প সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থপনা অধিদপ্তরের অধীনে হয়ে থাকে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। 


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান বলেন, আপনাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে সেখানে রাস্তার কাজ শুরু করা হয়েছে। এখনো চলমান রয়েছে। ডিসি স্যার রাস্তার কাজের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। ব্র্রিজের দুই পাশে রাস্তা নেই তবু নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজটি। কেন বা কার স্বার্থে এই ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকার কৃষক, সচেতন মহলসহ সুধীমহলে। আশপাশে নেই কোনো বসতবাড়ি নেই চলাচলের কোনো রাস্তা। তবুও ফসলের মাঠে প্রায় সাড়ে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। পাতবিলা গ্রামে ফসলের মাঠের যে অংশে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে তার কোন পাশে কোনো রাস্তা নেই। মাঠে কাজ করা কয়েকজন কৃষক জানান, এ সেতুটি কোনো কাজে আসবে না। অপ্রয়োজনে সরকারের ৬৫ লাখ টাকা জলে ফেলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই স্থানে সেতুর প্রয়োজন নেই। অথচ আশপাশে সড়ক নেই, বাড়িঘরও নেই এমন স্থানে সেতু হয়েছে।

 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW