নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস: অপরাধীরা যেন ছাড় না পায়

সম্পাদকীয় : | প্রকাশ: ১০ জুলাই, ২০২৪, ০৬:৩৭ এএম

বিভিন্ন সময় নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। তবে সম্প্রতি বিসিএস-সহ পিএসসির নেওয়া নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় জড়িত পিএসসির দুই উপপরিচালক ও এক সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। জানা যায়, ১২ বছরে পিএসসির নেওয়া ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি সিআইডি প্রশ্নফাঁস চক্রটির বিষয়ে তথ্য পেয়ে গোপনে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। এ ধারাবাহিকতায় চক্রের ১৭ জনের বিরুদ্ধে নিশ্চিত তথ্য পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর আলিশান জীবনযাপনের চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য সামনে আসছে। গ্রামের বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকায় ফ্ল্যাট-প্লটসহ তার একাধিক বাড়ি রয়েছে। ছেলে ও স্ত্রীর সংগ্রহে রয়েছে বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়ি। এ ছাড়া সরকারি জমি দখল করে গরুর খামার গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার জমি। বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম বলেছেন, উপপরিচালক মো. আবু জাফরের মাধ্যমে ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। পিএসসি সরকারি চাকরিতে নিয়োগসংক্রান্ত দায়িত্ব পালনকারী একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। অত্যন্ত দায়িত্বসম্পন্ন ও মর্যাদাপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নফাঁসের ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্র ১২ বছর ধরে সক্রিয় থাকার বিষয়টি ‘সর্ষের ভূত’ কথাটাই মনে করিয়ে দেয়। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের পরও পিএসসি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটি এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে, ‘গত ১২ বছরে পিএসসিতে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষা সম্পর্কে কোনো মহল থেকে কখনোই কোনো ধরনের অভিযোগ বা অনুযোগ ছিল না। তাই এটি প্রমাণিত যে, ওইসব পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ আমাদের কথা হলো, পিএসসির প্রশ্নফাঁসের বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। সরকারি চাকরিতে যারা প্রবেশ করবেন, তারা যদি ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পান, তাহলে তাদের মেধা, দক্ষতা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। অন্যদিকে বঞ্চিত হবেন প্রকৃত মেধাবীরা। সেটা হবে দেশের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই অস্বীকার না করে তদন্তের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের ছিদ্রগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেসব বন্ধ করতে হবে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় যারা জড়িত তারা যেন কোনোভাবে ছাড় না পায়। 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW