পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নির্বিচারে সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ সময় সড়কের মধ্যে পরে যাবার পরেও এক সিনিয়র সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাংবাদিক সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সদর রোড ও ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায়।
লাঠিচার্জে আহত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বিনা উস্কানিতে উপকমিশনার এসএম তানভীর আরাফাতের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সাথে সাংবাদিকদেরও পিটিয়েছে। এমনকি সড়কের মধ্যে পরে গিয়ে আহত হওয়ার পরেও সিনিয়র সাংবাদিক শামীম আহমেদকে পুলিশ পিটিয়ে আহত করে। ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ জানালে, পুলিশ সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন। পরে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করার পর তিনি নিজে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিয়েছেন। আহত সাংবাদিকদের শেবাচিমসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ আহত সাংবাদিকদের সু-চিকিৎসার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আহমেদ আবু জাফরসহ বরিশাল প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, বরিশাল সাংবাদিক ফোরাম সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
সূত্রমতে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচিতে দেশব্যাপী হত্যা ঘটনার বিচার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ সারাদেশে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা মেনে নেওয়ার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ নামক শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির অংশহিসেবে বেলা ১১টার দিকে নগরীর ফকিরবাড়ী রোড থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। মিছিলটি অশি^নী কুমার টাউন হলের সন্নিকটে আসার পর পরই পুলিশ লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করেন। ঘটনার ছবি ধারণ করতে যাওয়া স্থানীয় সিনিয়র ফটো সাংবাদিক শামীম আহমেদ, হৃদয়, তুহিনসহ ছয়জন সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করে পুলিশ। পুলিশের লাঠির আঘাতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। হামলার শিকার শিক্ষার্থী মৌসুমি আক্তার জানিয়েছেন, পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাদের ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে। কাউকে বাদ দেয়নি, চুল ধরে লাঠিপেটা করেছে।
বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়ক হুজাইফা রহমান জানান, একজন প্রতিবন্ধী পথচারীসহ পুলিশ ১১ জনকে আটক করেছিলো। পরবর্তীতে ওই প্রতিবন্ধীসহ পাঁচজনকে বিকেল তিনটার দিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকি ছয়জন শিক্ষার্থী এখনও পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের জেলার সমন্বয়ক ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ছিল। সেখানে এসে পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে অর্ধশত শিক্ষার্থীদের আহত করেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, বিরোধী ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতা রাস্তা অবরোধ করেছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালিয়েছে। পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের পরিচয় জেনে ছেড়ে দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষের ভয়ের কিছু নেই। সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে যাদের দোষী মনে হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।