ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার রেল লাইনের উপর প্রতিনিয়ত বসছে মাছের বাজার। রেল লাইনের দু’ধার দিয়ে অল্প জমিতে গড়ে উঠা মাছ বাজারটি ক্রমেই বড় পাইকার হাটে পরিণত হওয়ায় মাছ বাজারটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ বাজারটিতে ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা । বারবাজারের রেল লাইনে কাটা পড়ে ২০২৩ সালে ৫ জুলাই আব্দুল খালেক (৯০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়, ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্্রুয়ারী চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ৫০ উর্ধ্ব এক অজ্ঞাত ব্যক্তির খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিরাপদ স্থানে বাজারটি সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলে ধর্ণা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষও বার বার দায় এড়িয়ে গেছে।দক্ষিন অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ মাছের পাইকারী হাট কালীগঞ্জের বারবাজার হাট।এ হাট থেকে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ বিক্রয় হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় মাছ ক্রয় বিক্রয়। সকালে রেল লাইনের পাশে মাছের হাট শুরু হলেও পরে তা রেল লাইনের উপর গিয়ে শেষ হয়। জানাযায়, ১৯৩৬ সালে স্থাপিত রেল লাইনটি ঘিরে এ মাছ বাজার গড়ে উঠেছে। সময়ের সাথে বাজারের আকার হয়েছে বৃহৎ। প্রায় ৮৯ বছরে এ বাজারটি বড় পাইকার হাটে পরিণত হয়েছে। বারবাজার মাছ হাটের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব জানান, কেনা বেচার সময় হঠাতই শুনি ট্রেনের হর্ন বাজছে। তখনই আমরা সরে যায়। এমনও অনেকদিন হয়েছে ট্রেনের হর্ন শুনতে পাইনি। পাশের একজন শরীরে টাচ করেছে সরে যাওয়ার জন্য। বারবাজার মাছ হাটের পাইকারী ব্যবসায়ী শরত বিশ্বাস জানান,রেল লাইনের উপর মাছ বাজার না হয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে হলে ভাল হতো। আমরা এখানে মাছ কেনার জন্য আসলে অনেক ভয়ে থাকি। কারণ ট্রেন আসার সঠিক সময় আমরা তো আর জানিনা।
বাংলাদেশ রেল আইনে বলা হয়েছে, ১৮৬১ সালের রেল আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী লাইনের দুই পাশের ২০ ফুটের মধ্যে রেল সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি গরু ছাগলের প্রবেশ ও নিষেধ। গরু ছাগল রেল লাইনে ঢুকে পড়লে তা নিলামে বিক্রয় করার বিধানও আছে। একই ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, রেল লাইনের ২০ ফুটের ভিতর ২৪ ঘন্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। একই ভাবে রেল দূর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেল কর্তৃপক্ষ মামলা করতে পারেন। ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনে রেল চলাচলের দিক নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এমনকি রেলওয়ে অধ্যাদেশ (অবৈধ দখলমুক্ত) ১৯৭৯ অনুসারে রেলের জমি সঠিক ভাবে উদ্ধারও করা হচ্ছে না। রেল লাইনের উপর মাছ বাজার ও রেলের সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে কালীগঞ্জের বারবাজার রেল স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার মোবাস্বের হোসেন জানান, রেলের তরফ থেকে অনেক বার মাইকিং করে রেল লাইনের উপর বাজার বসাতে নিষেধ করেছি। তাতেও সচেতনতা কারো মধ্যে আসেনি। রেল লাইনের উপর ঝুকিপূর্ণ বাজার নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশাকরি এ বিষয়ের সমাধান হবে।