গাজা উপত্যকায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও কয়েকটি আরব রাষ্ট্র। গত রোববার ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ ও পণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, যা অস্ত্রবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে মিশর ও কাতার। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার এই পদক্ষেপকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ‘অস্ত্রবিরতি চুক্তি ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরায়েলকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’ বলে অভিযুক্ত করেছে। কাতার ও মিশর গাজায় অস্ত্রবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিল। সৌদি আরবও ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা অবরোধের ‘নিন্দা ও প্রতিবাদ’ জানিয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্ট: আমাদের প্রাণরক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দিতে হবে।’ তিনি ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তকে মানবিক সংকট আরও বাড়ানোর হুমকি হিসেবে দেখছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন যে হামাস মানবিক সহায়তা লুট করছে এবং সেগুলো ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার করছে’। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে হামাস মার্কিন প্রস্তাবিত অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, যদিও ইসরায়েল ওই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের এই সিদ্ধান্তের কারণে ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
হামাস ইসরায়েলের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা মানবিক সহায়তা লুট করেনি। হামাসের এক মুখপাত্র ইসরায়েলের অবরোধকে ‘সস্তা ব্ল্যাকমেইল’ এবং অস্ত্রবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা অস্ত্রবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে ছিল না, কারণ মধ্যস্থতাকারীরা দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি।
গত জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ১৫ মাস ধরে চলা সংঘর্ষ বন্ধ করে। এই চুক্তির অধীনে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দির বিনিময়ে প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপ ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হয় এবং গত শনিবার মধ্যরাতে তা শেষ হয়। দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী অস্ত্রবিরতি, অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা এখনো শুরু হয়নি।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তা আন্তোইন রেনার্ড বিবিসিকে বলেন, ‘গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকল পক্ষকে একটি সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’ অস্ত্রবিরতির পর থেকে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যা বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরি সহায়তা সরবরাহ করছে। তবে ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তের ফলে গাজায় মানবিক সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।