জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রথম কর্মসূচি

শহীদদের স্মরণে এনসিপির শ্রদ্ধা, দ্রুত বিচারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৪ মার্চ, ২০২৫, ০১:৩২ পিএম
শহীদদের স্মরণে এনসিপির শ্রদ্ধা, দ্রুত বিচারের দাবি

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের প্রথম কর্মসূচি পালন করেছে। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে দলটির নেতা-কর্মীরা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের স্মরণ করেন।

সকাল ৮টায় দুটি ডাবল ডেকার বাসে করে এনসিপির নেতা-কর্মীরা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছান। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অমর হোক’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, "১৯৭১ সালে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, তার মূলমন্ত্র ছিল সাম্য ও সামাজিক সুবিচার। কিন্তু ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই বাংলাদেশ এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা সেই আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে যাব।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদের লক্ষ্য শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নতুন সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রাখবেন।"

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ১০টায় এনসিপির নেতারা রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যান। সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের কবর জিয়ারত ও দোয়া মোনাজাতে অংশ নেন।

এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাই। ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে এই আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করা সম্ভব।"

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হলে দেশের প্রকৃত গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব হবে। জাতীয় নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করা গেলে নতুন কাঠামোয় দেশ পরিচালনা সহজ হবে।"

মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘যত দিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনার ফাঁসি দেখছি, তত দিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।’ তিনি বলেন, ‘খুনি হাসিনা লাশ কই ফেলেছে, তা জানা যায়নি। মায়েরা লাশ খুঁজতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। খুনির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে এই বাংলাদেশে অন্যকিছু চিন্তা করব।’

মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর এসেছে। তাদের মনে রাখতে হবে বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে পুরো প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষভাবে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

রায়েরবাজারে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিশাল সমাবেশের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এরপর ২১৭ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। দলটি দেশব্যাপী সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তারের পরিকল্পনা করছে।

দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, "আমরা সারা দেশে আমাদের সংগঠনের বিস্তার ঘটাবো এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নতুন প্রজাতন্ত্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবো।"

জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রথম কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে নেতারা জানান। তাঁদের আশা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে