দেশী প্রজাতির মাছের রেনুপোনা উৎপাদন করে সফল উদ্যোক্তা

এফএনএস (এস এম ওমর আলী সানি; আগৈলঝাড়া, বরিশাল) : | প্রকাশ: ৪ মার্চ, ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম
দেশী প্রজাতির মাছের রেনুপোনা উৎপাদন করে সফল উদ্যোক্তা

পনের বছর আগে চাকুরী ছেড়ে মায়ের দেওয়া একলক্ষ টাকা দিয়ে মাছের চাষ শুরু করে আজ একটি মৎস্য হ্যাচারী, মৎস্য ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও শতাধীক পুকুর ও ঘেড়ে মাছের চাষ করে সফল উদ্যোক্তার স্বীকৃতি পেয়েছেন বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামের রাসেল সরদার। দেশী মাছের  রেনু-পোনা উৎপাদনকারী যমুনা হ্যাচারী, মাছের খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা ফিড ও শতাধীক পুকুর-ঘেরে কর্মসংস্থানের সৃস্টি হয়েছে দেরশতাধীক বেকার যুবকের। ইতিমধ্যেই  জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দেশী মাছের রেনু-পোনা উৎপাদন করে সেরা মৎস্য চাষী সম্মাননা  পেয়েছেন তিনি।

তার যমুনা ফিস মৎস্য হ্যাচারীতে দেশী পাবদা, সরপুটি, টেংরা, শিং, কৈ, গুলশা, পাঙ্গাস, ভিয়েতনাম কৈ, মনোসেক্স তেলাপিয়াসহ কার্প জাতীয় মাছের উন্নত মানের রেনু-পোনা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলা গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে মৎস্য চাষীরা এসে চাহিদা মত পোনা নিচ্ছে। রাসেল সরদার তার নিজস্ব শতাধীক পুকুর ও ঘেরে নিজের উৎপাদিত রেনু-পোনা চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সারা ফেলেছে। মৎস চাষে রাসেল সরদারের সাফলে দেখে এলাকার অনেকেই মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

সফল মৎস্য চাষী মো. রাসেল সরদার বলেন, ২০১০ সালে নিজের প্রতিষ্ঠিত ইকরা ইসলামীক ক্যাডেট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাকুরি ছেরে দিয়ে মায়ের দেওয়া লক্ষাধীক টাকা নিয়ে একটি পুকুরে প্রথম মাছ চাষ শুরুকরি। এখন যমুনা ফিস, পদ্মা ফিড ও শতাধীক পুকুরে মাছ  রয়েছে, এখন আমার দ্বারা  শতাধীক বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সৃস্টি হয়েছে। হ্যাচারীতে বছরে দুই কোটি রেনুপোনা উৎপাদন হয়। মাছের  খাবার তৈরির জন্য উপজেলার বড়মগড়া নামক স্থানে পদ্মা ফিড নামে মাছের খাবারকারখানা করেছি। এখানে প্রতিদিন ১০ টন উন্নত মানের মাছের খাবার উৎপাদন হয়, নিজের শতাধীক পুকুরের মাছের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে অন্যন্য মৎস্য চাষী ও ডিলারের কাছে বিক্র করছি। 

 তিনি (রাসেল) আরো বলেন, পুকুরে দেশী সরপুটি, পাবদা, টেংরা, শিং, কৈ, গুলসা, মনোসেক্স তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ (ডিম ওয়ালা মাছ) পুকুর থেকে ধরে হ্যাচারীর হাউজে রেখে ৫-৬ ঘন্টা ঝর্না দিয়ে পানি দিচ্ছে, এর পরে হরমোন ডোজ (ইনজেকশন) দিয়ে পুরুষ মাছের সাথে একই হাউজে রাখা হচ্ছে, এর ১২ ঘন্টার মধ্যে মা মাছ ডিম দেওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে ডিম থেকে রেনু উৎপাদন হয়। প্রকার ভেদে দুই হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা কেজি দরে মাছের রেনু বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও বড় আকারের পোনা পিচ হিসেবে বিভিন্ন দামে বিক্র হয়। বিভিন্ন প্রকার পোনা সাইজ থাকায় দাম ও ভিন্নভিন্ন নির্ধানর করা হয়।  রেনু পোনা অক্সিজেন দিয়ে প্যাকেট করে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। 

স্থানীয় মৎস চাষী কাঠিরা গ্রামের পরেশ বিশ্বাস জানান, আমার পুকুরে মাছ চাষের জন্য রাসেলের কাছথেকে দেশীয় মাছের রেনুপোনা নিয়ে তার পরামর্শ মতো মাছের খাবার দিয়ে অনেক লাভোবান হয়েছি।

এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আগৈলঝাড়া মানিক মল্লিক বলেন দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, রাসেল সরদার দেশী মাছের প্রজনন বৃদ্ধির মাধ্যমে রেনুপোনা উৎপাদন করে দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য চাষী ও ক্রেতাদের  মাঝে  দেশী মাছের চাহিদা মিটাতে বড় ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃস্টি হয়েছে। 

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, আগৈলঝাড়ার সফল মৎস্য উদ্যোক্তা রাসেল সরদারের মাছের হ্যাচারী (যমুনা ফিস) একাধীকবার পরিদর্শন করেছি। দেশী প্রজাতির মাছের রেনুপোনা ও খাবার উৎপাদনে জেলার মধ্যে তার ভূমিকা অন্যতম। তিনি ২০২৪ সালে জেলা ও উপজেলায় দেশী মাছের রেনুপোনা উৎপাদনে  সম্মাননা সনদ অর্জন করেছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে