দুই টুকরা কমলা খাওয়ায় এতিম শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করলো শিক্ষক

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ৬ মার্চ, ২০২৫, ০৩:০৮ পিএম
দুই টুকরা কমলা খাওয়ায় এতিম শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করলো শিক্ষক

মাথুরাপুর আদর্শ এতিম খানায় ইফতারির অবশিষ্ট দুই টুকরো কমলা খাওয়ার অপরাধে মোহাম্মদ সাগর (১৬) নামের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করেছে শিক্ষক ইমরান হাওলাদার। বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগরের বাড়ি উপজেলার রাউতাইল এলাকায়। সে এতিম খানায় আবাসিক শিক্ষার্থী।পরে মারপিটের বিষয়টি জানতে পেয়ে পরিবারের লোকজন সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষক ইমরান হাওলাদার পলাতক রয়েছে। 

মোহাম্মদ সাগরের পিতা বেঁচে নেই। ফলে মা মধুমালা খাতুন ছোট বেলা থেকেই পাশ্ববর্তি মাথুরাপুর আদর্শ এতিম খানায় আবাসিকে রেখে ছেলেকে পড়াশুনা করাতেন।পড়ের বাড়িতে কাজ করে ও মানুষের থেকে সহযোগীতা নিয়ে ছেলের লেখাপড়া করার খরচ জোগাড় করতো। এতিম খানার ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগর সোমবার অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে ইফতার করে। এরপর এতিমখানার ডাইনিংয়ে দুই টুকরো কমলা অবশিষ্ট ছিল। পরে সাগর ওই কমলা খেয়ে ফেলে অন্য শিক্ষার্থীদের সামনে। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী সহকারী শিক্ষক ইমরান হাওলাদারকে বলে সাগর চুরি করে কমলা খেয়েছে।

বুধবার সকালে সাগরের আবাসিকের কক্ষে গিয়ে দুই টুকরো কমলা চুরি করে খাওয়া হয়েছে অভিযোগ করে সহকারী শিক্ষক ইমরান হাওলাদার কাঠ দিয়ে মোহাম্মদ সাগরকে বেধড়ক মারপিট করে। কিছুক্ষণ পর সে মাদরাসা থেকে বেরিয়ে বাড়িতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তখনই এতিমখানা থেকে পালিয়ে যায় শিক্ষক ইমরান হাওলাদার। পলাতক থাকায় এতিমখানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক আশিফা আশরাফী আইভি বলেন, সাগরের শরীরে মারপিটের অসংখ্যক চিহ্ন রয়েছে। শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক না হলেও তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আপনাদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। সাগরকে মারপিটের বিষয়ে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সাগরের মা সধুমালা খাতুন বলেন, খুব কষ্ট করে মানুষের কাছে সহযোগীতা নিয়ে ছেলেকে পড়াশুনা শেখাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার ছেলেকে খুব মারপিট করেছে স্যার। মারতে কোন জায়গা বাকি রাখেনি। ওরা আমার সন্তানকে নির্মম ভাবে মারপিট করেছে বলে কাদতে থাকেন।

তবে এতিম খানার প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কোন শিক্ষক ইমরান হাওলাদারকে পালাতে সহযোগীতা করেনি। অভিযুক্ত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। একজন এতিম শিশুতে সে এভাবে মারপিট করতে পারে না। এটা খুবই অন্যায় হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে