অবশেষে কানাডায় শেষ হতে চলেছে জাস্টিন ট্রুডোর নয় বছরেরও বেশি সময়ের শাসন। আগামীকাল শুক্রবার (১৪ মার্চ) দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন মার্ক কার্নি। তিনি দেশটির ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান
কানাডার গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমন স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজধানী অটোয়ায় কার্নি ও তার মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। গভর্নর জেনারেলের কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মূলত, কানাডার গভর্নর জেনারেল যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া
গত রোববার লিবারেল পার্টির নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন মার্ক কার্নি। দলীয় প্রধানের পদে নির্বাচনের জন্য মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটে কার্নি ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন, যেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিনা ফ্রিল্যান্ড পেয়েছেন মাত্র ১১ হাজার ১৩৪ ভোট। কানাডার রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, হাউস অব কমন্সের সবচেয়ে বড় দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী হন। সে অনুযায়ী, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কার্নি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কে এই মার্ক কার্নি?
মার্ক কার্নি কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর ছিলেন। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডেরও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় ধরে আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা কার্নি একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত।
বাণিজ্য সংকট ও নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ
কার্নি এমন সময়ে কানাডার দায়িত্ব নিচ্ছেন, যখন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংকটে রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্নি এই পরিস্থিতিকে ‘জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী মুহূর্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন।
নতুন সাধারণ নির্বাচনের সম্ভাবনা
নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কানাডায় নতুন সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী এপ্রিল মাসের শেষ দিকে কার্নি নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারেন।
ট্রুডোর বিদায় ও লিবারেল পার্টির নতুন যাত্রা
টানা নয় বছর ক্ষমতায় থাকার পর চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন জাস্টিন ট্রুডো। ২০১৫ সালে তিনি প্রথমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী হন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। তার সিদ্ধান্তের পর লিবারেল পার্টি নতুন নেতা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত মার্ক কার্নিকে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়।
মন্ত্রিসভার আকার নিয়েও আলোচনা চলছে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কার্নির নতুন মন্ত্রিসভা ট্রুডোর তুলনায় ছোট হতে পারে। সেখানে ১৫ থেকে ২০ জন মন্ত্রী থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে বর্তমানে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৩৭।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্নির শপথ গ্রহণের মাধ্যমে কানাডার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে।