সংঘবদ্ধ কিছু মানুষের নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতাকে অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় ‘মব জাস্টিস’ বলা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই মব জাস্টিসের নামে কাউকে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। যখন-তখন কারও বাড়িতে ঢ়ুকে লুটপাট করা হচ্ছে। কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোথাও আবার কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনিক কাউকে জুতার মালা পরিয়ে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে। বেড়েছে দলবদ্ধ হয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে কাউকে হত্যা করার ঘটনাও। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছেন রাজনীতিবিদ, পুলিশ, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সর্বত্র এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক আক্রোশ থেকে অথবা ঐ ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির অর্থসম্পদ লুটপাট করাই থাকে মূল লক্ষ্য। এরপর চলে হামলা, লুটতরাজ, গণপিটুনি ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনা। একের পর এক চলতে থাকা এ ধরনের ঘটনাকে ‘মব জাস্টিসে’র নামে দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। অনেকেই এটাকে ‘মব জাস্টিস’ বলছেন। আসলে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারে দায়মুক্তির সুযোগ তৈরি হয়। এটাকে ‘মব ভায়োলেন্স’ বলা হয়। এটা থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে। ফলে এটাকে অপরাধ হিসেবেই দেখতে হবে। সেই অপরাধের সঙ্গে যতজনই যুক্ত থাকুক না কেন তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, তা দৃশ্যমান নয়। বস্তুত এ ব্যাপারে সরকারকে এক ধরনের নির্বিকার বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও মব জাস্টিসের কোনো কোনো ঘটনায় সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে। এটা ঠিক, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পুলিশের মনোবলে চির ধরেছিল, তারা নিষ্ক্রিয় ছিল বেশ কিছুদিন। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা আবার কর্মস্থলে ফিরে এসেছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা। রয়েছে আনসার বাহিনী। এরপরও দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না কেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সর্বত্রই কেমন যেন একটা গাছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, দেশে কেউ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সরকারকে বাস্তবেই কঠোরতার প্রমাণ দিতে হবে।