নওগাঁর মহাদেবপুরে ঈদকে সামনে রেখে নানা পরিচয়ে শুরু হয়েছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী। নানা অজুহাতে এরা হাতিয়ে নিচ্ছেন বিস্তর টাকা। এদের টার্গেট মূলতঃ কয়েকটি সরকারি দপ্তর, ইটভাটা, কারখানা ইত্যাদি। এরা ভদ্র বেশে এসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নম্্রভাষায় নানা অজুহাতে টাকা চেয়ে নিচ্ছেন। প্রতিদিন এদের তৎপরতায় অতিষ্ট সংশ্লিষ্টরা। কেউ দিচ্ছেন ভদ্রতা বজায় রাখার খাতিরে, আবার কেউবা দিচ্ছেন বাধ্য হয়েই। কিন্তু এটাকে অবৈধ চাঁদাবাজী বলতে পারছেন না কেউ। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছেন যারা বিভিন্নভাবে অনিয়ম করে থাকেন।
উপজেলার একটি ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত একজন কর্মকর্তা তার দপ্তরে জমা হওয়া অনেকগুলো চিঠি দেখিয়ে জানালেন, প্রতিদিন একাধিক গ্রুপ আসেন চাঁদা নিতে। রাজশাহী, নওগাঁ ও স্থানীয় সাংবাদিক পরিচয়ে নানা কারণ দেখিয়ে টাকা চাচ্ছেন। একজন নিজেকে রাজশাহী বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ঈদের পরবী চান। নওগাঁ জেলায় কর্মরত কিছু ভূঁইফোড় পত্রিকার কথিত সাংবাদিকেরা নতুন নতুন আইডি কার্ড দেখিয়ে চান ঈদ পরবী। কেউ কেউ রীতিমত চিঠি দিয়ে পত্রিকার জন্য ঈদের শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন চান। দাবি করেন মোটা অংকের টাকা। বাধ্য হয়ে তারা চাহিদার চেয়ে কম টাকা দিয়ে বলেন, বিজ্ঞাপন দেয়া লাগবেনা, এমনি টাকা নিয়ে যান। এক্ষেত্রে স্থানীয়রাও বাদ যান না। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম হচ্ছে আগে শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন ছেপে তারপর বিল নেয়ার। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে তেমন পরিচিত না হলেও এবং পত্রিকার সার্কুলেশনও তেমন বেশি না হলেও শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা বলে আগাম টাকা নিয়ে অনেকেই আর তা ছাপেন না। এছাড়া রাজনৈতিক পরিচয়ে নানা অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র দিয়ে চাওয়া হচ্ছে টাকা। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুষ্ঠান হচ্ছে ইফতার মাহফিল। কিন্তু ইফতার মাহফিলের এত বেশি দাওয়াত আসছে যে, তারা অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। এদের দিতে হয় ন্যুনতম পাঁচশ’ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তবে কেউ কেউ কাজের সামান্য ভূল ধরে লাখ টাকাও দাবি করেন। তখন বাধ্য হয়ে দিতে হয় মোটা টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মৌসুমী টাকা সংগ্রহকারিদের মূল টার্গেট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর, খাদ্য গোডাউন, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় প্রভৃতি। মহাদেবপুরের সাবেক এক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এরকম মৌসুমী টাকা সংগ্রহকারিদের সবাইকেই পাঁচশ’ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা করে ঈদের পরবী দিতেন। উপজেলা পরিষদে কর্মরত সব শ্রেণির কর্মচারিও তার কাছ থেকে এর অংশ পেতেন। পরে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতির খবর ছাপা হলে তাকে অন্যত্র বদলী করা হয়। তার চালু করা নিয়ম এখন চালু রাখতে পারছেন না নতুনরা।
জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা জানান, মিলেমিশে থাকার জন্য তারা টাকা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার একটু বেশি হয়ে গেছে। স্থানীয় মূলধারার সাংবাদিকেরা জানান, জেলা পর্যায়ে প্রকৃত সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করা হলেও উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে চরম বৈষম্য। এখানে রাজনৈতিক কারণে প্রকৃত সাংবাদিকদের বছরের পর বছর কোনঠাসা হয়ে থাকতে হয়। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের বিজ্ঞাপন এমনকি উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা ও অন্যান্য সরকারি অনুষ্ঠানের চিঠিও পান ভূঁইফোরেরা। তারাই কথিত চাঁদাবাজীতে যুক্ত। রাজনৈতিক মদদেই চলেছে চাঁদাবাজী। এখনও চলছে তাই। যারা প্রশাসন চালাচ্ছেন, চাঁদাবাজীও করছেন তারাই। এরা পুকুর খনন, গাছ কাটা আর মাটি কাটা দেখলেই ছুটে যান সেখানে। হাতিয়ে নেন টাকা। প্রকৃত সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করা হলে ভূঁইফোরদের অপতৎপরতা কমবে বলে তারা মনে করেন। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা জানান, উপজেলা বিএনপির কেউ এসব চাঁদা সংগ্রহের কাজে জরিত নয়। উপজেলা বিএনপির কোন অনুষ্ঠানেই সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোন চাঁদা চাওয়া হয়নি কখনো। তবে বিভিন্ন দলে রাজনৈতিক গ্রুপিং থাকায় এখানে চাঁদাবাজী বেড়েছে।