সরকার পতনের পর বিভিন্ন বিশ্বিবজদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসার প্রধান দের পদত্যাগ করতে চাপ সৃষ্টি করেন শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল। যারা স্বৈরাচারের দোসর ছিলো তারা অনেকে স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যান। আবার অনেকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে বিক্ষোভ মিছিল অবরুদ্ধ রাখা সহ নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। তারই অংশ হিসেবে নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাতিয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জিয়াউল হক হাসেমের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে একই প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক ও পৌরসভা বিএনপির বহিষ্কৃত সভাপতি কাজী আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে।
রবিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে এবিষয়ে হাতিয়া থানা এবং নৌকন্টিনজেন্ট কমান্ডারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এর আগে গত রবিবার সকালে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, অধ্যক্ষ জিয়াউল ইসলাম হাসেম দীর্ঘ ৩মাস মেডিকেল ছুটিতে থাকার পর রবিবার সকালে মাদ্রাসায় প্রবেশ করেন। এসময় তাকে দেখে তিনতলায় উঠার সময় প্রধান পটক বন্ধ করে দিয়ে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে কাজী আবদুর রহিম। তখন অধ্যক্ষ নিচে নেমে যাওয়ার সময় দৌড়ে গিয়ে কাজী আবদুর রহিম তাকে ধাক্কা দিয়ে পেলে দেয় এবং লাথি-উষ্ঠা, কিল-ঘুষি মেরে শরীরে মারাত্মক জখম করে। অন্য শিক্ষকরা তার ভয়ে কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
৫ আগস্টের পর থেকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কাজী রহিম সহ কুচক্রী মহল বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে মাদ্রাসার ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিভিন্নভাবে উস্কানি দিয়ে মিছিল করায় কাজী আবদুর রহিম। অধ্যক্ষ জিয়াউল হক হাসেম পদত্যাগ করলে কাজী আব্দুর রহিম অধ্যক্ষ হবেন এই আশায় তিনি এসব করছেন বলে জানা যায়।
কাজী রহিম বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়, তবুও তার অনিয়ম কমেনি বরং আরো বহু গুনে বেড়েছে। ৫ আগষ্টের আগের তেমন প্রভাব বিস্তার না করলেও ৫ আগস্টের তার প্রভাব বিস্তারে অতিষ্ঠ হাতিয়া পৌরসভাবাসী। সাবেক এমপি প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের নাম ভাঙিয়ে সব অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন কাজী রহিম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কাজী আবদুর রহিম মোহাম্মদ আলীর সাথেও লেয়াজু করেছিলেন এবং তার থেকে টাকা খেয়ে চুপচাপ ছিলেন। মামলা ভয় দেখিয়ে এবং মামলা থেকে জামিন ও খালাস দিয়ে দেবে বলে ব্যাপক টাকার লেনদেন করেন কাজী রহিম। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, কাজী রহিম একজন বহিষ্কৃত নেতা, তার সাথে সবাই কেন আতাত করবে, আমার বুঝে আসে না। তবে সে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বহু অপকর্মে লিপ্ত, আশা করি দলীয় আরো যারা সিনিয়র নেতা রয়েছেন বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
এই বিষয়ে অধ্যক্ষ এ.এইচ.এম জিয়াউল ইসলাম বলেন, একটা প্রতিষ্ঠান চলাতে গেলে কোন না কোন প্রয়োজনে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর দ্বারস্থ হতে হয়েছে। আমি কোন অনিয়মের সাথে যুক্ত নই। আজকে আমার সাথে যেটা হয়েছে এটার জন্য বিচার চাই।
এই বিষয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা কাজী আবদুর রহিমকে মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রেসপন্স করেন নি।
এই বিষয়ে হাতিয়া থানা ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুজ্জামান বলেন, লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে জায়েদ আল হাসান বলেন, অধ্যক্ষ এ.এইচ.এম জিয়াউল ইসলামের বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু এটি ফোজদারী ইস্যু, তাই আমি হাতিয়া থানাকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।