খুলনার দিঘলিয়া ও নড়াইলের কালিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পদভারে অশান্ত হয়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী দু’টি উপজেলার গাজীরহাট ও হামিদপুর ইউনিয়নের কতিপয় সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আতংকিত হয়ে গ্রাম ছেড়েছে বহুলোক। খুন, ভাংচুর,লুটপাট, জ্বালাও পোড়াও, চাঁদাবাজী, দখলবাজী, রাহাজানি এঅঞ্চলে নিত্যনৈমেত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসব কিছু হচ্ছে এলাকার আধিপত্য নিয়ে। মোট কথা গাজীরহাট বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে কারা? পাশাপাশি রয়েছে গাজীরহাট বাজারসহ খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত শত একর অরক্ষিত সরকারি জমির দখলবাজী।
ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গাজীরহাট বাজারটি একটি প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র। বাজারটি ঘিরে রয়েছে কয়েকটি উপজেলার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। বাজার নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখা মানেই এ অঞ্চলের রাজনীতি তার হাতের মুঠোয় থাকা।
এ দুই অঞ্চলে ইতিমধ্যে যতো খুন হয়েছে তার অধিকাংশ বাজারের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে। গত ১৫মার্চ সংঘটিত সংঘর্ষে হাসিম মোল্লার মৃত্যুও বাজারের আধিপত্য নিয়ে। ২০১৪ সালে গাজীরহাট বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেয় গাজীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লা ও তার ভাই যুবলীগ নেতা হামীম মোল্লা।
গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঠান্ডু মোল্লা ও তার ভাই একাধিক রাজনৈতিক মামলার আসামী হয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। সে থেকে গাজীরহাট বাজারটি তাদের হাত ছাড়া হয়ে যায়। এরপরই স্থানীয় একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের দু'টি গ্রুপ বাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে।
সুত্র জানায়, গাজীরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্যার গ্রুপ ও কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামের জনি মোল্যা গ্রুপের মধ্যে বাজারের আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলছিলো।
এরমধ্যে গত ১৩ মার্চ জনি মোল্যা স্থানীয় গাজীরহাট বাজার এলাকা থেকে ঠান্ডু মোল্লার অনুসারী রউফ মোল্যাকে বের করে দেয়। এ নিয়ে পরদিন সকালে রউফ মোল্যার লোকজন জনি মোল্যার বাড়িতে গিয়ে তাদের লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে হাসিম মোল্লা নামের একজন নিহত এবং দুই পুলিশ সদস্য ও জনি মোল্লাসহ কয়েকজন মারাত্মক আহত হয়।
হাসিম মোল্লা নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় আবারো উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে জনি মোল্যা পক্ষের দুইজনকে অস্ত্র ও গুলি সহ আটক করে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১০জন আহত হয়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের গ্রুপ বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে গাজীরহাট বাজারের নির্বাচিত কমিটিকে হটিয়ে একটি অনির্বাচিত কমিটি গঠন করেছে। যা নিয়ে ঐ রাজনৈতিক দলের দু'গ্রুপের মধ্যে চলছে সশস্ত্র শক্তির মহড়া। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দু'গ্রুপ মোটা অংকের চাঁদা তুলছে। চাঁদা দিতে না পারা অনেকে দোকানপাট খুলছেনা। আনুমানিক শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চাঁদাবাজদের কারণে বাজারের ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়েছেন আতংকিত। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
গাজীরহাটের এই বাজার কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ইতিপূর্বে অনেক হত্যাকান্ড হয়েছে। এরমধ্যে হামিদপুর ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোল্যা আঃ হামিদ খুন হয়। ৪৫ বছর পর তার ছোট ছেলে চেয়ারম্যান মোল্যা নাহিদকে হত্যা করে। ১৯৯৫ সালে যুবলীগের দুই নেতা শাহিন ও লিচুকে হত্যা করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়। সূত্র জানায়, দিঘলিয়ার গাজীরহাট ও কালিয়ার হামিদপুর এলাকায় ইতিপূর্বে কমপক্ষে ৮জনকে হত্যা করা হয়েছে।
বাজার দখল কেন্দ্রিক গত ১৫ মার্চ দু গ্রুপ সশস্ত্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় কালিয়া উপজেলার সিলিমপুর গ্রামের মোল্যা বংশের হাসিম মোল্যা নিহত হয়।এবং অস্ত্রসহ গ্রেফতার হলো একই বংশের সিরাজ মোল্যা।
ঘটনার একদিন পর গাজীরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোল্লা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু ও তার ভাই যুবলীগ নেতা হামীম মোল্লার বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করে। পরবর্তীতে আরও কয়েক দফা বাড়িতে হামলা করে বাড়ির সমস্ত মালামাল লুট করে। এছাড়া বাড়ির দেয়াল ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।