শীতকাল শেষে গরম আসতে না আসতেই আবার আলোচনায় গরম হয়ে উঠছে ডেঙ্গু ইস্যু। এবার পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ ও ভয়ংকর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতির জন্য সব মহল থেকেই প্রথমত দায়ী করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবকে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, একদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে বিরতি দিয়ে বৃষ্টির কারণে যে পরিবেশ তৈরি হয়, তা মশার প্রজননবান্ধব। এমন পরিবেশ যেকোনো মশা ও পোকামাকড় বংশবৃদ্ধির সহায়ক হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে মশা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস বা নষ্ট করে ফেলা। তা না হলে মশা থেকে কোনোমতেই সুরক্ষা মিলবে না বাংলাদেশের আবহাওয়ার কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু হলো একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা সংক্রমিত হয় মশার কামড়ের মাধ্যমে। এটি বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে বেশি হয়ে থাকে। বেশির ভাগ শহুরে এবং আধা শহুরে এলাকায় এই মশার প্রজনন বেশি। ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক মশা হচ্ছে এডিস ইজিপ্টি মশা এবং কিছুটা হলেও এডিস অ্যালবোপিকটাস। এ ছাড়া অন্য মশাগুলোরও প্রজনন ও বংশবিস্তারে তাপমাত্রার বড় প্রভাব রয়েছে। চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হওয়ার খবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে। যাদের মধ্যে ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ হাজার ৯০২ জন। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের তথ্য অনুসারে, ষাটের দশকে বর্তমান বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা প্রথমে ‘ঢাকা জ্বর’ নামে পরিচিত ছিল। তবে ২০১০ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রায় ধারাবাহিক হয়ে উঠেছে প্রতিবছর। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকাল এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। অত্যধিক বৃষ্টিপাত, জলাবদ্ধতা, বন্যা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং দেশের ঋতুচক্রে অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিস্থিতি ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়া ভাইরাসসহ অন্যান্য ভেক্টরবাহিত রোগের সংক্রমণের জন্য আরও অনুকূল হয়ে ওঠার কথা বলছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও। তাই এখনি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন যে মশার কীটনাশক দিচ্ছে এটি পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া প্রতিবার এটি ল্যাব টেস্ট করে ছিটাতে হবে। এমনকি ছিটানো ওষুধও মাঠ থেকে নিয়ে টেস্ট করা উচিত। প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে লার্ভার তথ্য জানতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় যারা বাধা হবে, তাদের জরিমানাসহ আরও কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে।