ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন পলিটেকনিক এবং মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
'কারিগরি ছাত্র আন্দোলন' ব্যানারে আয়োজিত এই আন্দোলনের ফলে তেজগাঁও, শিল্পাঞ্চল, মহাখালী ও আশপাশের এলাকাজুড়ে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে স্থবির হয়ে পড়ে। তীব্র যানজটের কারণে অফিসগামী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ হাজারো নাগরিক চরম ভোগান্তির শিকার হন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছয়টি দফা দাবির কথা জানিয়েছেন, যেগুলো হলো:
১. হাইকোর্ট কর্তৃক জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় বাতিল, বিতর্কিত নিয়োগবিধি সংশোধন এবং সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়সসীমা নির্ধারণ, আধুনিক কারিকুলাম প্রণয়ন এবং ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যম চালু।
৩. সংরক্ষিত পদে অপ্রাসঙ্গিক নিয়োগ না দিয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মর্যাদা নিশ্চিত করা।
৪. কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ বন্ধ এবং প্রকৃত কারিগরি শিক্ষিত জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৫. পৃথক ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় এবং ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন।
৬. পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ডুয়েটের অধীনে ভর্তি কার্যক্রম চালু।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সড়ক ছাড়ব না। সচিবালয়ে কেউ যাবে না—কর্তৃপক্ষকে আমাদের কাছেই আসতে হবে।”
তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা ছিল, “দাবি মানো, অবরোধ তোলো”, “কারিগরি শিক্ষার মর্যাদা চাই”—এমন নানা স্লোগান।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রফিকুল ইসলাম জানান, “শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় তেজগাঁও ও আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে গেছে। যানজট ছড়িয়ে পড়েছে মহাখালী পর্যন্ত। আমরা বিকল্প রুট ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান ট্রাফিক বিভাগ তাদের সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, উত্তরা-বনানী-মহাখালী রুটে ইনকামিং যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। নাগরিকদের শান্তা প্লাজা ও গুলশান-১ হয়ে বিকল্প রুট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, “আমরা তাদের সচিবালয়ে গিয়ে দাবিগুলো উপস্থাপন করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়ছি না। কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।”