কপালে চিন্তার ভাঁজ চাষি ও ব্যবসায়ীদের

রাজশাহীতে গাছেই শুকিয়ে ঝরছে আমের গুটি

এম এম মামুন; রাজশাহী | প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম
রাজশাহীতে গাছেই শুকিয়ে ঝরছে আমের গুটি
রাজশাহী জেলার এবছর প্রায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আম বাগান থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গাছেই শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। এ নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজশাহীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের। বৃষ্টির দেখা না মেলায় খরার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে রাজশাহীতে গত ৭ এপ্রিল ১ মিলিমিটার, ১১ এপ্রিল ২৩.৩ মিলিমিটার, ১৫ এপ্রিল ৪.৮ মিলিমিটার, ১৮ এপ্রিল ১২ মিলিমিটার ও ১৯ এপ্রিল ২.৮  মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর বৃষ্টি না থাকায় চাষিরা এখন প্রার্থনা করছেন, এক পশলা বৃষ্টি যেনো তাদের আম বাগান ও স্বপ্ন দুটোই বাঁচিয়ে দেয়। রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া, মোহনপুর, পবা, হরিয়ান, পারিলা, শ্যামপুর, বুধপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাপপ্রবাহে আম বাগানের গাছের গুটি ঝরে পড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। যেসব গাছের প্রায় ৯০ শতাংশ মুকুল এসেছিল, তার ৭০ শতাংশ থেকে গুটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহ এবং বৃষ্টির অভাবে অনেক গুটিই এখন আর টিকছে না। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, তাপপ্রবাহের প্রভাবে আমের বোটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে গুটি ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় সেচ ও আমের গায়ে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হলেও, প্রকৃতিতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। রাজশাহীর পবা উপজেলার আমচাষি শামসুজ্জামান বলেন, কালবৈশাখী ঝড় আগেও দেখেছি। কিন্তু খরার মধ্যে যদি ঝড় আসে তাহলে আমের বোটা আগেই শুকিয়ে যায়। এতে আমের ক্ষতি কয়েকগুণ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। বাগান লিজ নিয়ে আমচাষ করা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এবার আমগাছের মুকুল দেখে অনেক আশা করেছিলাম। ভাবছিলাম, এবার ঋণ পরিশোধ করার পর কিছু লাভ করতে পারব। কিন্তু বর্তমানে যে হারে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে, তাতে লাভের আশা ফিকে হয়ে গভীর হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চেষ্টা করছি, তবু মনে হচ্ছে শেষ রক্ষা হবে না। অন্যদিকে নতুন বাগানের ছোট আম গাছে পানি স্প্রে করে কোনোভাবে আমের গুটি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চাষি মনি মিঞা। তবে বড় গাছে পানি ছিটাতে শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় তা আর টিকছে না। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে কৃষি অফিস বলছে- পানি সেচ ও পানি স্প্রে করতে হবে গাছে। তবে বৃষ্টির পানি ছাড়া আমের গুটি ঝরা বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছে ফল গবেষণা কেন্দ্র। গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাপপ্রবাহের কারণে আমের বোটার আঠা শুকিয়ে যাচ্ছে। বোটায় রস না থাকায় আম ঝরছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল ২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চাষীরা বলছেন- এ বছর বাগানগুলো আমের ৯০ শতাংশ মুকুল এসেছিল। মুকুলগুলো ঝরে গিয়ে আবার নতুন করে পাতা বের হয়েছে। ফলে আমের গুটি টিকেটেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এই আম টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে গেছে—কারণ সপ্তার শুরুতে মৃদু তাপপ্রবাহ চলছিল। শেষ ভাগে এসে শুরু হয়েছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। বৃষ্টিপাত না হলে, ফলে আরও আমের গুটি ঝরবে। এর মধ্যে রয়েছে কালবৈশাখী ঝড়। আমচাষী মনি মিঞা বলেন, কয়েক দিন থেকে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছি। ছোট গাছগুলোতে পানি স্প্রে করছি। একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিক নিয়ে দেখা যাচ্ছে খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর বড় বড় গাছগুলোতে পানি স্প্রে করা সম্ভব না। সেগুলো ট্যাপ লাইনের মাধ্যমে পানি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাপপ্রবাহে আমের ক্ষতি হবে, গুটি ঝরবে। স্বাভাবিক বৃদ্ধি থমকে যাবে। বৃষ্টিপাত হলে আমের গুটি ঝরা কমে যাবে। আমের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে আমের গুটি ঝরা রোধে গাছের গোড়ায় সেচ ও গাছে পানি স্প্রে করতে হবে। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক এসএম গাউসুজ্জামান বলেন, গেল কয়েক দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গতিবিধি দেখা গেছে রাজশাহীতে মৃদু থেকে মাঝারী তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে